সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সদাপুরাণ-৩

অশোক দেব
সদাপুরাণ- তিন
হাসন মিয়াঁর বাপ রহিম মিয়াঁ। রহিম মিয়াঁ পুরুষ। প্রকৃত পৌরুষ নিয়ে তাঁর ধারণা স্পষ্ট। মাটিতে পড়ে থাকা কলসির কানা পেচ্ছাপ করে ফাটাতে পারে যে পুরুষ, সে পুরুষ। তিনি  এ কাজ পারেন। তাঁর বয়স ষাটের বেশি। সুতরাং তিনি একজন পুরুষ। এরকম নানা তত্ত্বের জনক রহিম মিয়াঁ আসলে গপিস্ট। যারা দরদর করে মিছে কথা বলতে পারে,আমাদের ভাষায় তারা গপিস্ট। কিন্তু রহিম মিয়ার গপ নিছক মিছেকথা নয়। তাঁর বলার ভঙ্গিটি ঔপন্যাসিকের।রহিম মিয়াঁ ফাজিল। উত্তরপ্রদেশের কোনও এক মাদ্রাসা থেকে তিনি এই ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি ফাজিল পাশ। এটা প্রচারিত। তিনিই এর প্রচারক। নিজের সাম্রাজ্য থেকে এক পা নড়েন নাবিশাল বাড়ি। তিনটে পুকুর। গাছপালা, গোয়াল, বাড়ির পশ্চিমে নদী পর্যন্ত সব জমি তাঁদের। রাজার লেঠেল ছিলেন এদের বাপ পিতামহগোমতী চর বানিয়ে বানিয়ে চলে এল এই নতুন খাতে। তার আগে ছিল আরও পূবেসেখানে নদীর আদিরূপ মরাগাঙ হয়ে শুয়ে আছেএইসব চরার দখল নিয়েছিল এদের পূর্বপুরুষেরা। এই সত্যটুকু ছাড়া রহিম মিয়ার সবকিছু মিথ্যা দিয়ে রচিত। যেমন তাঁর সোনার ফ্রেমের চশমা। সোনাটা সত্য। চশমাটা মিথ্যা। কারণ, সেটিতে পাওয়ার নেই। তাঁর বাহারি হুঁকাটা সত্য, কিন্তু ধূমপান মিছে। কারণ তিনি ধূমপান করেন না। গল্পের মাঝে মাঝে যেসকল শ্লোক রহিম মিয়াঁ অনর্গল বলেন, সেগুলো আরবি। তাঁদের উচ্চারণটা সত্য কিন্তু ভাষাটি মিছে। কারণ তিনি তালব্য, মূর্ধা, জিহ্বা ব্যবহার করে যা বলেন, তার একটি শব্দও আরবি নয়। উচ্চারণরীতিটা এমন অভ্যাস করেছেন, শুনলে তালেব তো তালেব, আলেমরাও ঘাবড়ে যায়
জেডা আপনে ইডি করেন কিতা? কোরানের নামে বানাইয়া সুরা কন, হের উপরে কী ভাষা কন তার নাই ঠিক...
এইকথা বলেছিল করিমগঞ্জ থেকে আসা নতুন হুজুর। চারদিনে তার চাকরি নট
করে দিলেন রহিম মিয়াঁ। দায়ঃ সখিনার মাইয়ারে ফোসলানো।
যাবার আগে সেই তরুণ হুজুর বারবার জানতে চেয়েছিল, ‘জেডা সখিনাডা কেডা?’
তোর মা, খবিশ। যা ট্যাকা লইয়া দূর হ।
মাদ্রাসা চলে রহিম মিয়ার টাকায়।
জেডা বলবেন। তোমার কাজ শুনে যাওয়া এবং বিশ্বাস করা। সেই বিশ্বাস করবার ভঙ্গী যত বিশ্বাসযোগ্য হবে, তোমার ভাগ্য তত খুলবে।খেতে পাবে নানা কিছু। কাঁচামিঠে আম থেকে শুরু করে কাবাব, যা খেতে চাও পাবে একটু আপত্তি করেছ, কিংবা যুক্তি খুঁজলেই শুনতে হবে খিস্তি। সে খিস্তিতে মায়ের চরিত্রনাশ হয়ে যেতে পারে, বাপ চোরস্য চোর হয়ে যেতে পারেন। সুতরাং সেদিকে না যাওয়া ভাল।
এই বিশাল সম্পত্তি রহিম মিয়াঁ কী করবেন? হাসন আর মজিদ তাঁর দুই পুত্র। হাসন হল নিষ্কর্মা। মজিদ মারফতি। একজন বিয়ে করে আর তালাক দেয়। আরেকজন বাঁশি বাজায় আর হায় হায় করে। রহিম মিয়াঁর স্ত্রী নেই। কাঁচামিঠে আমগাছ আছে। তাঁর নীচে তিনি করাত কোম্পানির লুঙ্গি আর লখনৌ থেকে আনা পাঞ্জাবি পরে দারুণ এক আরামকেদারায় বসেন। পাশে বাহারি স্টুলের ওপর সেই পেতলের হুঁকো। তার গোটানো নল।আরেকটা স্টুলের ওপর নেয়ামুল কোরআন, পবিত্র আল কোরআন আর মকছেদুল মোমিন ও ইংরেজি পত্রিকা। সেসব থাকে, পড়া হয় না। রহিম মিয়াঁ সারা দুনিয়াকে অস্বীকার করেন। তাতেই তাঁর আনন্দ।মুখে সেই অস্বীকৃতি মেখে তিনি বসে থাকেন। তাঁর পায়ের কাছে বসে লোকে কথা শোনে। ডম্বুরের বাঁধ তৈরির সময়ে এক মা হাতির মর্মন্তুদ আত্মত্যাগের গল্প বলেন। গোমতীর ব্রিজ তৈরি করার সময় কেবল বানায় আর ভাঙে, বানায় আর ভাঙে। দিনে যতটা বানানো হয় রাতে সেটা ভেসে যায়। ইঞ্জিনিয়ারের দল আসে যায়। কিছু করতে পারে না। রহিম মিয়াঁ ছেলেধরা পাঠিয়ে দূর হবিগঞ্জ থেকে এক বেশ্যাপুত্রকে আনালেনতাকে বলি দেওয়া হয়েছিল নির্মীয়মাণ ব্রিজের গোড়ায়।সেই রক্ত পান করে নদী শান্ত হয়। এইসব বলেন রহিম মিয়াঁ।এসবের ভিত্তি তিনি আবার আজকে বলা কাহিনী কালকে অন্যরূপ করে দেবার মালিকও তিনি। তোমার কাজ বিশ্বাস করা।
আজ শুক্রবারআজই আসল কেরামতি। রহিম মিয়াঁর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্টির নখ বড়। তাতে শর্ষের তেলে ভুসাকালি মেখে চকচকে দর্পণ তৈরি করা হয়।জুমার নমাজ সেরে এসে মসজিদ হতে ফিরে একটা সময়ে রহিম মিয়াঁ চোখ রাখেন নখদর্পণে। চশমা খোলা। পুতপুতে চোখ। মরুর বড় ভাই সজু। সে আর তার দলবল বসে থাকে। রহিম মিয়াঁ হঠাৎ হঠাৎ একটা নম্বর বলেন। এরা টুকে নেয়।
পৃথিবীতে এক স্থান আছে। মেঘালয় রাজ্যের কোথাও দুই পাহাড়ের মাঝখানে বিশাল এক মাঠসেখান কত কত তীরন্দাজ চোখ বেঁধে লক্ষ্যভেদ করে। এক থেকে নিরানব্বই লেখা লক্ষ্য। কলা গাছের কেটে আনা কাণ্ডে সেসব নম্বর লিখে সাজিয়ে  দাঁড় করিয়ে রাখা। দূর হতে তীর ছোঁড়া হয়। যেটাতে লাগে সেটাই বিজয়ী। সে নম্বরে যে এক টাকা লাগিয়েছিল সে ছিয়াত্তর টাকা পাবে। যারা রহিম মিয়াঁর নম্বরে টাকা লাগায়, তাঁদের কেউ না কেউ জেতে। তাঁকে কিছু দিতে হয় না, মসজিদে দানবাক্সে দেওয়া যাবে। চাপাচাপি নেই। দিলেও আচ্ছা না দিলেও আচ্ছা।
,
এই করে লোকেদের ঠকায় মরুর ভাই সজু আর এই গপিস্ট বুড়া। আমি বুঝি। তবু যাই শুক্রবারে তাঁর নখদর্পণের দরবারে। বসে থাকি। বিশ্বাস করতে মন চায়। যে তুমি আসলে নেই, সে তোমাকে কি দেখাতে পারে না রহিম মিয়াঁর নখদর্পণ? তোমার ওই ভ্রূজোড়াঈশ্বরের রচিত দুটি উর্দু পঙক্তি আমি দেখতে চাই। দেখতে চাই তোমার দুটি চোখ।তোমাকে দেখতে চাই, যে তুমি নেই।তাঁর সেই বুড়ো আঙ্গুলের কালো চকচকে নখে আমি তাকাই। কী যেন ভেসে ওঠে, ছায়া ছায়া কে যেন আসে চলে যায়। কার যেন মুখচ্ছবি দেখি। সে তুমি নয়, কে যেন। একটা মিথ্যে হবে, কিংবা মৃত্যু।ইতি ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪
তোমার একান্ত

সদানন্দ

মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সদাপুরাণ- দুই

অশোক দেব
সদাপুরাণ
দুই.
মওত কা কূঁয়া-র ছেলেটা বাঙালি এ কথা কে জানতো! তার মোটরবাইকটি পুরনো। সেটি নিয়ে সে কাঠের কুয়োয় নেমে যায়তার দেওয়াল ধরে ছেলেটির তীব্র ভ্রুম-ভ্রুম। ঘোরে, ঘোরে। যেন সে জন্ম থেকেই একটা কূপের মধ্যে  পুরনো একটা মোটর বাইক নিয়ে ঘুরে চলেছে। নীচে চলে যাচ্ছে, ওপরে উঠে আসছে।জীবনের ঝুঁকি নেওয়াটাই তার ব্যবসা ঝুঁকিটাই বিক্রি করে। হিন্দিতে কথা বলে, আসলে বাঙালি।বিড়িতে পুরে গাঁজা খায়। কথায় কথায় বেনচোদবলে।  সে যে বাঙালি সেটা জেনেছে মরু।
নগেন্দ্র সাহাকে বলে নগুসা। নগেন্দ্র নগু হয়েছে আর সাহা হয় সানগুসা বারকি বাঁধে। কৃষকের থেকে ধান কিনে এনে সেদ্ধ করে, সেদ্ধ করা ধান শুকিয়ে নেয়। পরে ভাঙিয়ে চাল করে। সে চাল বিক্রি করাই তার কারবার।এটাই বারকি বাঁধা।নগুসা বারকি বান্ধেকিন্তু আর কিছু বাঁধতে পারেনি। ওর বউটা কথায় কথায় সোডা খায়। খাবার সোডা। পেটে যন্ত্রণা।একদিন সে ফাঁসি দিয়েছিল যন্ত্রণায়। তখনও মরেনি। তার শাড়ির নীচে পা বেয়ে হলুদ প্রস্রাব গড়িয়ে পড়ছিল।নগুসা হতভম্ভ হয়ে কেবল জয়রাম, জয়রাম করছে। উঠছে বসছে। মরু অসম্ভব সেজেছিল সেদিন। তার আনন্দমেলা যাবার কথা। মওত কা কূঁয়া-র ছেলেটা তো বাঙালি। আনন্দমেলায় সে বাইক নিয়ে কাঠের কূপে ঘোরে।  সে খেলা শেষ হলে চিত্রহারেমিঠুন সেজে নাচে। মরুর মিঠুন পছন্দ। এমন সময়ে মা-কে সজনের গাছ হতে ঝুলে ছটফট করতে দেখে কেমন একটা চিৎকার করল। শুনে মনে হল, সে আমাকে কু করেছে।মেয়ে তো, মাত্র তার শক্ত স্তনে জমাট কুয়াশা ভাঙছিল। ভাবলাম কষে একটা চড় দিয়ে আসি। ঢুকতেই দেখি ধান শুকানোর চকচকে শাদা উঠোনের পাশে একটা সজনে গাছ। একটি মেয়েমানুষ গাছের ডাল হতে ঝুলছে। গলায় একটা নীল নাইলনের দড়ি। মাটি থেকে মাত্র ফুট দুয়েক উচ্চতায় তার ফাটা ফাটা পাগুলি। যে মাটি ছেড়ে যাবে বলে সে ঝুলেছিল, সে মাটির নাগাল পাবার জন্যই তার পা দুখানি নীচের দিকে হাতড়ে চলেছে। গাছের ডালটি তরুণ। সে যেন ভেঙে পড়বে। কিন্তু কিছুতেই ভাঙছে না। দুলে দুলে মৃত্যুর সঙ্গে খেলা করছে। জড়িয়ে ধরি ঝুলতে থাকা দেহঠেলে ওপরে ধরে রাখিমরুর মা ফাঁসিতে ঝুলে পড়া, সোডাখোর একটা নারী আমাকে তার সবটা ভার দিয়ে দিল। কিছুটা মৃত্যু মিশে থাকার কারণে, তার ওজন বেশ বেড়ে গিয়েছে। তার শরীরে কেমন একটা রোগের গন্ধ। সজু আর কাজু নগুসা-র দুই ছেলে। সজল, কাজল। তার মধ্যে সজু তীর খেলার এজেন্ট। ডাইল খেয়ে বুঁদ হয়ে থাকে। ডাইল মানে ফেন্সিডিল। সে এখন বাড়িতে নেই। কাজুটা ছোট। স্কুলে যায়। সেটাকে ডাকি
একটা কিছু দিয়া দড়িডা কাইট্যা দে।
সে ছুটে রান্না ঘরে যায়। এর মধ্যে অনেক লোক জমে গিয়েছে। আত্মহত্যা আসলে একটা তামাশা। এটা দেখতে পাওয়া যায় না।মরে যাওয়াটা দেখতে পাওয়া বিরল ঘটনা। মৃতকেই কেবল দেখি আমরা। তাই আত্মহত্যাকালে জীবন্ত মানুষ দেখা আরও বড় তামাশা। সকলে এই কাণ্ডটি ঘটার সম্ভাব্য কারণ নিয়ে, মুখে মুখে, চোখে চোখে এমনকি নীরবতা দিয়ে নানা গল্প রচনা করছেচারদিকে এত গল্প জমে গেল যে, কখন কাজু বটনিদা দিয়ে দড়ি কেটে দিয়েছে, বুঝতে পারিনি। কাজুর মা-র পুরো বডি আমার ওপরে আশ্রয় করল। আমি তাকে নিয়ে পড়ে গেলাম মাটিতে। আমি নীচে, মরুর, সজু ও কাজুর মা এবং নগুসা-র বউ আমার ওপরে। এই প্রথম আমি একটি নারী শরীরের স্পর্শ পেলাম। ফলত আমি বুঝতে পারলাম না, নারী কি মৃত্যুর ভার নাকি নারীর ভারকে মৃত্যু বলে। আমি তাকে শুইয়ে দিয়ে বেরিয়ে চলে আসি। ততক্ষণে কে একটা রিকশা ডেকে এনেছে।আমি চলে এলাম। রিকশাওয়ালাটা তো জানে না কী ঘটে গেছে। আমি তার পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছি, সে আমাকে কু করে দিল। চুপ ছিলাম। আরও চুপ হয়ে গেলাম।
গার্লস স্কুলের পেছনে আনন্দমেলা এসেছে। সেখানেই সেই মৃত্যুকূপ। সেখানে তাঁবুতে তাঁবুতে নানা জিনিস। বয়ামে পোরা বিষধর সাপের দেহ।ফর্মালিনে চোবানো। একটা তাঁবুতে আছে নানারকমের জাদু-দর্পণ। কনভেক্স, কনকেভ। সামনে দাঁড়ালে নিজেকে মোটা, বেঁটে কিংবা ভাঙাচোরা দেখা যায়। আলাদা একটা তাঁবু আছে, সেখানে সাপে-নেওলে ঝগড়া বাঁধানো হয়। সারাক্ষণ বলে, এই লাগবে এই লাগবে, আসলে লাগে না। আমি কখনো সেই যুদ্ধ দেখিনি। একটা হাতি আছে। সে একটা বলের ওপরে উঠে দাঁড়ায়। তার গায়ে ঘাপটি মেরে আছে বুনো মনখারাপওদিকে একটা গগনচুম্বী টাওয়ার হয়েছে। সেটাতে একটা ছেলে উঠে যায়। গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে নীচের ছোট পুকুরটাতে লাফিয়ে পড়ে। সে ধীরে ধীরে টাওয়ারে উঠে যাচ্ছেগান হচ্ছে ইয়ে দুনিয়া, ইয়ে মেহফিল, মেরে কামকি নেহিযেন সে মরে যাবে। আসলে মরবে না। জীবিত লোকেদের মৃত্যুর কথা বললে কেমন একটা আলো জ্বলে বুকের মধ্যে। দুঃখের আলো। সেই আলোটাই এরা বিক্রি করে। আর এইদিকে সেই ঝলমলে তাঁবু। সেটাতে আবার একটা মেহফিল। চিত্রহার।  টিকিট কেটে সার করে লোকে ঢুকছে। আমার দুয়েকজন আগেই দীনেশ স্যার। একটা মাংকি ক্যাপ পরে আছেন। আসলে তত শীত নেই যতটা সঙ্কোচ। আমিও ভেতরে গেলাম। খড়ের ওপর বসে আছি। কালো পর্দা খুলল। আয়াম আ ডিস্কো ডান্সার হল। তারপরেই এল হিম্মতওয়ালাও তাকি, ও তাকি, ও তাকি তাকি তাকি রে...’ দেখলাম সে ছেলে আজ জিতেন্দ্র হয়েছে। আমাদের মরু শ্রীদেবী হয়ে বেশ নাচল। তার স্তনযুগল হয়ে গেল মেয়েদের সাধারণ বুকফলে সে দুটো ভয়ঙ্কর নাচছিল। মরু আমাকে দেখেছে। কৃতজ্ঞতা বশত সে আমার দিকে বুক নাচালো। তাল ছেড়ে দিয়ে দুবার বেশিই নাচালো। পরে চোখে চোখ পড়তে মিষ্টি হেসে আবার নাচালো। আমি তাঁবুর বাইরে চলে আসি। এসেই তোমাকে মনে পড়ল।
,
তোমাকে ভাবতে হলে তামাশার তাঁবু পেরিয়ে আসতে হয়এলাম। আমার গায়ে এখনো একটা মিহি আত্মহত্যা লেগে আছে। কয়েকটা উচ্ছিষ্ট রকমের গান লেগে আছে। মেয়েদের বুকের নাচন লেগে আছে। কী করি বল তো? স্নান করে নেব?
তোমার স্নানের কথা ভাবি। জলের সঙ্গে গান মিশিয়ে তুমি স্নান কর। আমি তোমার গুনগুন শুনি। তোমাকে স্নান করিয়ে দেওয়া জলের ঝমঝম শুনি... ধুর, আজ আর লিখতে ইচ্ছে করছে না।
জানো, যখন তাঁবু হতে বেরিয়ে এলাম, মরণী ছুটে এলো সাথে সেই ছেলেটা। রোগা একটা দাগ-লাগা ছেলে। তার গায়ে হাজার বছরের দারিদ্র্য লেগে আছে। গাঁজায় চোখ লাল। মরণী, মানে মরু, এসে আমাকে ঠুক করে একটা প্রণাম করল। ছেলেটাকে দিয়েও প্রণাম করালো।
   আমরা আজগা মা-র বাড়িত বিয়া করলাম। মরণী বলল
   আশিব্বাদ রাখবেন। বলেই ওদিকে চলে গেল মওত কা কূঁয়া।
আজ একটা স্বপ্ন দেখব ঠিক করলাম, জানো? দেখব, একটা ওরকম কাঠের কুয়োর মধ্যে দিশাহীন একটা মোটরবাইকে চোখ বেঁধে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে মরুকে। সে ঘুরছে। আকাশের কোথা হতে ঝুলছে তার মায়ের দুটো ফাটা ফাটা পা। ইতি ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৪
তোমার একান্ত

সদানন্দ