বৃহস্পতিবার, ২১ অক্টোবর, ২০২১

গিরগিটি কে?

 

মানুষ সজীব বস্তু। জীবন মাত্রই পরিবর্তনশীল। রাজনীতি মানুষ দ্বারা চালিত হয়। সেই মর্মে রাজনীতিও সজীব। গণতন্ত্রের প্রধান চালিকা পরিবর্তন। মানুষ তার রাজনৈতিক অবস্থান বদল করে। করে বলেই সরকারের বদল হয়। মানুষ বদল করে দেখে, যাকে আনে সে পারফর্ম না করলে, তাকে আবার বদলে দেয়। আমেরিকা দেশে সেটা খুব হয়। আর হয় আমাদের দেশের কেরালা রাজ্যে। কিন্তু বদলে যাওয়া মানুষকে কোনো দলবিশেষের খবর্দার কিংবা আজীবন সুবিধাপ্রাপ্তরা ‘ গিরগিটি’ বলে ছাপ্পা লাগায় না। ভারতের, বিশেষ করে ত্রিপুরা-পশ্চিমবঙ্গের বামেরা তাদের সঙ্গে নাড়া বেঁধে আজীবন আটকে না থাকলেই মানুষকে নানা ছাপ্পা দেয়। কঙ্গি, প্রতিক্রিয়াশীল, দালাল, সিআইএ-র দালাল্, হাম্বুইট্যা এবং ইদানীং গিরগিটি। এরা কাদের গিরগিটি বলে? আমার মত যারা, যাদের মোহভঙ্গ হয়েছে এবং এদের দৌরাত্ম্যে একটি মহান আদর্শের বিকৃত বিচ্যুতিতে বেদনাতুর হয়ে ফেসবুকে বকাবকি করে, তাদের বলে। কেন বলে? কারণ একদা এদের আমি সাহায্য করেছি, আমি যা পারি, তা যখন যা বলেছে করে দিয়েছি। ব্যক্তিগত ক্ষতি স্বীকার করেও করে দিয়েছি। বিশেষ করে যুবদের জন্য। আমার বিশ্বাস ছিল যুব-তরুণরাই পারবে কিছু করতে। এদের বিশ্বাস আমার চাকরি, আমার পোস্টিং, আমাদের গ্রাসাচ্ছদনের ব্যবস্থা এরা করে দিয়েছে। তাই আমাকে চিরকাল এদের দাস হয়ে থাকতে হবে। সেটা তো সম্ভব নয়। এবার কিছু গিরগিটি ধরা যাক।

      ১৯৪২ সাল। ভারত ছাড়ো আন্দোলন। এই আন্দোলনই ইংরেজ শাসনের কফিনে শেষ পেরেক। কিন্তু এরা তাতে অংশ নেয়নি। ব্রিটিশ নেতা হ্যারি পটলারের এক চিঠিতে এরা ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ায় । পরে কংগ্রেস এদের উপর প্রচণ্ড বিরক্ত হয়। সেই বিরক্তি নিরসনের জন্য গান্ধীজির কাছে পাঠানো হয় সিপিআই নেতা (তখন দল ভাঙেনি) মোহন কুমারমঙ্গলমকে। এই মোহনবাবু পরে ইন্দিরা গান্ধীর ভক্ত হন। পুরস্কার স্বরূপ পরে তাঁর ক্যাবিনেটে মন্ত্রী হন।

 গিরগিটি কে? 

    কংগ্রেস সোস্যালিস্ট না কি বুর্জোয়া দল, সে নিয়ে দেশীয় বামেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। ফলে স্ট্যালিনের উপদেশ আনবার জন্য মস্কো যাত্রা স্থির হয়। তেলেঙ্গানা ইত্যাদির পর বিখ্যাত 'ক্যালকাটা লাইন'কে ইতোমধ্যে 'গ্রেট ব্লান্ডার' ঘোষণা করা হয়। মস্কোতে যাওয়া হল। ডাঙ্গে এবং আরো কয়েকজন গিয়েছিলেন। আচ্ছা, ডাঙ্গে! আজকাল মার্সি পিটিশন নিয়ে খুব হইচই।আমরা কী জানি, শ্রীডাঙ্গে অনুরূপ দয়াভিক্ষা করে ইংরেজকে চিঠি লিখেছিলেন? তা-ও মাত্র চার বছরের কারাবাস থেকে মুক্ত হতে। 'I beg to remain, Your Excellency's Most Obedient Servant, Shripat Amrit Dange.' Written this day 28th July, 1924 Endorsement No. 1048,

 

 dated 31-7-1924.

 

Forwarded in original to I.G. [Inspector General] of prisons U.P. for disposal.

Sd/- W.P. Cook Col. I.M.S. Superintendent of Jail. Seal of I.G. Prisons 13070 Dated 1-8-1924.


     ১৯৬২ সালের চিন-ভারত যুদ্ধে এদের ভূমিকা তো জানাই আছে সকলের। এমনকি সাম্প্রতিক চিন-ভারত সীমান্ত সংকটেও এরা ভারতকেই দায়ী করে।  চিনের পার্টির শতবর্ষে শুভেচ্ছায় গদগদ হয়। 

গিরগিটি কে?

     ১৯৭১। ইন্দিরা গান্ধী সুপুত্র সঞ্জয়ের হাত ধরে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করলেন। নিজের দলের লোকজনকে জেলে পোরা হচ্ছে। তখন গ্রেফতার এড়াতে কারা গিয়েছিল তাঁর কাছে অনুকম্পা ভিক্ষা করতে? ২০১৬ সালে এসে সিপিআই জেনারেল সেক্রেটারি সেই বিখ্যাত বুলিটি বললেন : ভুল হয়েছিল। 'Supporting Emergency was a mistake: CPI leaders'

গিরগিটি কে? 

    'গলি গলি ম্যায় শোর হ্যায় রাজীব গান্ধি চোর হ্যায়' এই শ্লোগান দিয়ে রাজীবকে ক্ষমতাচ্যুত করে বিজেপি-র সঙ্গে মিলে ভিপি সিংহের সরকার রচনা কারা করেছিল? বর্তমান বিজেপি-র উত্থান তো সেই সময় থেকেই। যে বোফর্স কামান নিয়ে অতকিছু, পরে দেখা গেল সেটিই কার্গিল যুদ্ধ জেতাল। পরে আবার গিয়ে 'কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম'-এর গালভরা ডাক দিয়ে মনমোহন সিংহ সরকারের মধু খেতে চলে গেলেন এরা। সেই প্রোগ্রামে বোফর্সের তদন্ত ও দোষীদের শাস্তিদানের বিষয়টি ছিল না। 



গিরগিটি কে? 

      আর সংস্কৃতি? স্বয়ং ঋত্ত্বিক ঘটক মধ্যমেধার পার্টি কমরেডদের জ্বালায় অস্থির ছিলেন, আমরা কোন ছাড়। ঋত্ত্বিকের ভাষায়, 'The Party generally see the Cultural Front in two ways – one, as a “money – earning machine” (these are harsh words we know, but they just can not be helped), and, two as a mobilizer of meetings and conferences to keep the crowd (and not masses) engaged with whatever the artists can offer.'
মানে, সংস্কৃতির লোকজনকে দল টাকার মেশিন আর লোক ধরে রাখার যন্ত্র ছাড়া কিছু মনে করে না। বলা বাহুল্য এরা ঋত্ত্বিককে দল থেকে বের করে দেয়। আর আজ সংস্কৃতির লোকেদের জন্য কেঁদে সারা। 

গিরগিটি কে? 
      
      পশ্চিমবঙ্গ। 'আমরা ২৩৫ ওরা ৩৫'। হায় আজ 'আমরা' শূন্য। সেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করা হল জেতার জন্য। নেওয়া হল এক ইসলামি নেতাকে।

      গিরগিটি কে? 


     আজ বাংলাদেশের সংকটে কিচ্ছুটি বলা যাচ্ছে না। বললে বলা হচ্ছে বাংলাদেশের বামেরা বলেছে তো। কী হাস্যকর। এরপর বলা হচ্ছে সেন্ট্রাল কমিটি বলেছে। হায়। 


গিরগিটি কে? 


      এখন ত্রিপুরাতে সমসম। তৃণমূল কংগ্রেস হুড়মুড়িয়ে আসছে। বামেরা নরম নরম। ডাকলে যাবে না যে, তেমন গ্যারন্টি নেই। 

গিরগিটি কে?

      যা সত্য, অন্তত আমার কাছে যা সত্য মনে হয় আমি বলব। আগেও বলেছি। ফেসবুকেই বলেছি। অনেক পোস্ট তুলেও নিতে হয়েছে ফোন পেয়ে। এখন, আমাকে গালিগালাজ করে কী হবে? বদলির ভয়ে তোমাদের কাজ করে দিয়েছি? না হে। বদলির চাকরি করি, বদলি তো হবেই। সম্প্রতিও বদলি হলাম। তো? আসলে, কাজ করতে ভাল লাগে, তাই করেছি। আর সেই মহান আদর্শ যাকে তোমার তারতার করেছ, তার স্বার্থে করেছি। এখন মোহভঙ্গ হল। কথা বলব, সে তোমরা যতই গিরগিটি বলো।

অনেক ধন্যবাদ

[ লিঙ্কগুলো 'পশ্চিমা মিডিয়া' বা 'বাজারি' নয় অধিকাংশই সো কলড 'আমাদের'। 




 

২টি মন্তব্য:

  1. যে আদর্শটাকে সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসে,সে-ই পারে আদর্শবিচ্যুতিকে এমন নির্মোহভাবে আঁকতে।তোমার একটাই রঙ......সত্যের সাদা।❤️

    উত্তরমুছুন