শনিবার, ১৩ মার্চ, ২০২১

পুরস্কারের পরে






পুরস্কারের পরে

সেদিন পুরস্কারপ্রাপ্তি হল।সাহিত্যকৃতির জন্য।হাজার হাজার শুভেচ্ছাবার্তা পেয়ে আমি আপ্লুত। এমন এমন ব্যক্তিত্ব ফোন করেছেন, যাঁদের ফোন পাওয়াটাই একটা পুরস্কার। প্রণতি, ভালবাসা।

এবার আমার করণীয় কী? অনেক অনুশীলনে নিজেকে কিছু জিনিস শিখিয়েছিলাম :

১। কূর্মবৃত্তি : জনবাহুল্যে নিজেকে নিজের অন্দরে ঢুকিয়ে ফেলা।

২। সংগীতসঙ্গ : যে সংগীত রচিত হয়নি, কিন্তু গীত হয়ে চলেছে, তাঁর সঙ্গ করা।

৩।পাঠ : যেমন মৌনীর সঙ্গে মৌনী কথা বলেন, দূরত্বের ভাষায়, তেমনি রচয়িতার সঙ্গে রচনামাধ্যমে সম্পর্কনির্মাণই হল আমার পাঠ। পাঠ করাকে সেদিকে উন্নীত করতে চেয়েছি। কতক পেরেছি কতক পারিনি।

      কোষ্ঠী ইত্যাদিকে আমি ঠিক বিশ্বাস করি না। আবার অবিশ্বাস করি সেটাও বলা যায় না। কোষ্ঠীবিচারক বলেছেন আমার রাহু-বৃহস্পতি যোগ আছে। তাকে গুরুচণ্ডাল দোষও বলে। এই মুহূর্তে একেবারে শান্তস্থির, স্পিরিচুয়াল এই চণ্ডাল, উন্মত্ত। এই জিনিস আমাকে ঘোর আনপ্রেডিক্টেবল করে দিয়েছে। সেটাকে সংস্কার করবার বহু সচেতন চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছি। কোষ্ঠীবিচারক আমাকে সাবধান করেছিলেন, জীবনে কারাবাস করতে হবে। একটি বিশেষ ধারার রাজনীতিতে যোগ দেবার পর ভেবেছিলাম, তার কারণে জেল হবে। শেষে সেই রাজনীতিই ছেড়ে দিই। জেল যাওয়া হয়নি। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্তে আমাকে দুবছর কারাবাসীদের পড়ানোর কাজ করতে হয়েছে।সে-ও একপ্রকার কারাবাস। একটি দুর্ঘটনার কথাও নাকি আছে জন্মনক্ষত্রাদির ভাষায় লেখা। সেটিও হয়েছে। আমার গাড়ি তছনছ হয়ে গেলেও আমার কিচ্ছুটি হয়নি। গাড়িটি গেল

      অত কথা বলবার কারণ? নিজেকে কাল সারাদিন ঘরে আটকে রেখেছি। আর কিছু বিষয়ে মনস্থির করেছি। সেসব নিবেদন করব :

     আগে যে তিনটি জিনিস বলেছি, সে তিনটি বিষয়ে আরও অনুশীলন করব। এযাবৎ অশোক শেষ করব। তাতে এ পর্যন্ত লেখা কবিতাগুলো যোগ্য ব্যক্তি দ্বারা সুসম্পাদিত হয়ে মুদ্রিত হবে। আত্মপরিব্রাজন বলে একটি গদ্যমালিকা যৌথভাবে প্রকাশিত একটি গ্রন্থের অংশ। সেটির সংস্কার করে স্বাধীন পুনর্মুদ্রণ করব। ত্রিষ্টুপ প্রকাশনাকে আগামী গল্পসংকলনের পাণ্ডুলিপি শীঘ্র চুড়ান্ত করে দেব। যাঁদের কথা দিয়েছি, তাঁদের সময় মতন লেখা দেব। কবিতা আশ্রম পত্রিকায় যে ধারাবাহিকটি ছাপা হচ্ছে, তার বাকি অংশ সৎভাবে লিখে শেষ করব। আগস্টমাস নাগাদ একটি উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে ছাপা হবে। যথাসময়ে সব বলব।

    সক্রিয় প্রচেষ্টায় নিজের ব্যক্তিত্ব থেকে রাহুর ভূমিকা কমিয়ে আনব

     ছোটোবেলা থেকে পুরস্কার নিতে মঞ্চে যাইনি। আমার পুরস্কার সর্বদাই অশোকের হয়ে অন্য কেউ নিয়েছেন। এটি নিলাম। এ পুরস্কার আসলে, আমাকে যাঁরা পড়েন তাঁদের দিক থেকে একটি সাবধানবানী। তাই, নিতে ভাল লাগল, কারণ এটি হল সেই অঙ্কুশ যা উন্মত্ত হস্তিকে শাসনে রাখে

[ ছবিগুলো তুলে দিয়েছেন লেন্সের কবি, আমার প্রিয় ছবিওয়ালা পার্থসারথি চক্রবর্তী (Parthasarathi Chakrabarti)]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন