মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সদাপুরাণ -এক

অশোক দেব
সদাপুরাণ

বাঁশ দিয়ে বানানো হলেও এটিকে আর বাঁশ বলে না কেউ। বলে, গর্জনকাঠি। চিতায় মৃতকে নাড়িয়ে দিতে, পড়ে যাওয়া লাকড়ি ঠিক মত সাজিয়ে দিতে গর্জনকাঠি লাগে। সকলে এর ব্যবহার জানে না। শিখতে হয়। আমি শিখেছিলাম এখন বিল্টু শিখেছে। শবদাহ করাও একপ্রকার লোকসেবা। সেই সেবা যে কার প্রতি  সেটাই প্রশ্নমরা মানুষ কি আর তা নেয়? তবু আমাদের ক্লাবের ছেলেরা পাড়ায় কেউ মরলেই তেতে ওঠে। একেক জনের এক রকম ইন্টারেস্ট। কেউ ঠিক করেছে জীবনে একশো আটটা মড়া পুড়বে। কেউ চক্ষুলজ্জায় গিয়ে শ্মশানে হাজির হয়। কারও মদের লোভ। কেউ কেউ কাঠ বেকার, কেউ মারা গেলে একটা দিনের স্বাদবদল হয়। আবার কেউ একদম অন্য কারণে গিয়ে মড়াবাড়িতে চলে যায়।  যেমন, কমলদা মড়া বাড়িতে যায় শোকাকুল নারীদের দেখতে। তার নাকি ভালো লাগে। কী কাণ্ড! কমলদা এমনিতেও একটু সেই টাইপের। তবুও বিলাপরত, শোকবিহ্বল নারী দেখতে একজন মানুষ মৃতের বাড়িতে ছুটে যায়! কমলদা যায়। লোলুপ তাকিয়ে থাকে ক্রন্দনরত মেয়েদের দিকে, বউদের দিকে, এমনকি বালিকার দিকে।  এখন অবশ্য সুগার হয়েছে খুব। শুকিয়ে হাফ হয়ে গেছে শরীর। কমলদা শ্মশানে, মড়া বাড়িতে যান না বিশেষ। আজ এসেছেন, সদানন্দ অদ্ভুত ছেলে ছিল তো। তার ওপর সুইসাইড কেস।
তখন সদানন্দ পুড়ছিল। সে আর সদানন্দ ছিল না তখন। লাশ। ডেডবডি। এর মধ্যে বেশ কাটাচেরা হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল বডি পেতে পেতে। আমি দেখলাম, মিষ্টিদার ভুঁড়িটা মাঝে মাঝে নিজে নিজে কাঁপছিল। মানে বেশ আনন্দ হচ্ছিল তার। দেদার টাকা ওড়াচ্ছে। লাশঘরের পেছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই চলল মদ্যপান। এমন সময়ে দেবলের কাজ বেড়ে যায়। ব্যস্ত। মিষ্টিদা টাকা দিয়ে যাচ্ছে, দেবল মদের বোতল, চানাচুর, জলের বোতল, প্লাস্টিকের গ্লাস, সব যোগাড় করছে। ফ্রি পেয়ে সকলেই দুয়েক পাত্র ঢেলে নিচ্ছে। সেটা শ্মশানেও চলল। এপাশে লোকনাথ আশ্রম, সামনে গোমতী, পাশে বেলগাছের বন। ক্ষণে ক্ষণে বিচ্ছু ছেলেগুলি চিৎকার করে উঠছিল, কু কু...

ওই শব্দটা সদানন্দ সহ্য করতে পারত না। এখানে যারাই এসেছে, সবাই সদাকে ক্ষেপাত। আজও ক্ষেপিয়ে চলেছে। আজকাল মদ খাই না। ওই শব্দটা যত শুনছি তত মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এবার ছাড় না, মরা মানুষ তো আর ক্ষেপবে না। কেউ কানে তোলে না কথা। চরম রাগ হল বিল্টুর ওপর। সদার খুলি ফাটছিল না। বিল্টু গর্জনকাঠি দিয়ে প্রাণপণ মারছে আর চিৎকার করছে , কু... কু... কু... মাথার তার ছিঁড়ে গেল। এগিয়ে গেলাম। বিল্টুর লিঙ্গ বরাবর কষে লাথি মারলাম একটা। পড়ে গেল। তারপর থেকে এই কু শব্দটা আর নিতে পারি না। আজকাল যেখানে যাই, কেউ না কেউ ওই কু কু করে ওঠে। মাথার তার ছিঁড়ে যায়।
নন্দ দারোগা আসলে চন্দ দারোগা। চন্দ টাইটেল ওর পছন্দ নয়। তাই সে আদালতে গিয়ে নিজেকে সুবল চন্দের জায়গায়, সুবল নন্দ করে নিল। আমি তাকে চন্দই ডাকি।  ‘ চন্দদা,আমার তো রাগ ওঠে। শালারা আমারেকু কুকইরা ক্ষেপায়। আমি কিন্তু সদা না, জানেনই তো। একটা একটা কইরা খুন করুম।
      – আরে ভাই, ডেঞ্জারাস মানুষ আছিল এই সদানন্দ
    কেমন?
    ডেঞ্জারাস। বাইরে এক ভিতরে আরেক... পণ্ডিত টাইপের আছিল শালারপুতে
    যেইসব চিডি লেখছে...
    কারে?
    কারে কে জানে, শালারপুতে তলে তলে রোমিও আছিল
    ধুর
    না রে, ঠিক
    একটা কথা কই ভাই, আমনেরে এই কু-এ পাইছে। আমারেও পাইছিলো। এই কেস হ্যাণ্ডেল করতে গিয়া আমি যে কী কী পাইছি, আমনেরে কমু। আপাতত এই ডায়েরি নিয়া যান। কোন্‌ এক মাইয়ারে সদা কীসব চিডি লেখছে... মাথা মুণ্ডু বোঝেননি দেখেন

সেই সব ডায়েরি আমি নিয়ে চলে এসেছি। ছেলেটা এত গভীর আর এত প্রেমিক ছিল?দরোজা ভেঙে আমরা যখন সদানন্দের ঘরে ঢুকেছিলাম, অবাক হয়ে গেলাম।  জীবনে এত গোছানো ঘর আর দেখিনি। এত পরিপাটি, কেমন একটা মায়াবী গন্ধ।  এত বই... এত গানের ক্যাসেট, এত এত সব ছবি...
নন্দ দারোগা যে ডায়েরি দিয়েছে, তাতে দেখি অদ্ভুত সব চিঠি। একটা মানুষ এত দুইরকম হতে পারে? যে সদানন্দ বাইরে বেরোলে সর্বদা ভয়ে ভয়ে থাকতো, সর্বদা একটা বেকুবমার্কা হাসি ঝুলিয়ে রাখতএকই ড্রেস, একই ঝোলা, সে এসব চিঠি কাকে লিখেছে। কী লিখেছে এসব!

চিঠিঃ এক
,
ভূমিকম্প টের পেলে? কী করছিলে তখন? আমি ঝনঝন করে সামনের মাঠে গিয়ে দাঁড়ালাম। ঘরের কম্পন মাঠে ছিল না। শাঁখ আর উলুধ্বনিতে ঘিরে ফেলেছিল চারদিক। ঠিক তখনই আমি দেখলাম, অনেক উটের গ্রীবা। ধড়হীন। হেঁটে চলে যাচ্ছে আকাশ দিয়ে। আমিও হাঁটতে লাগলাম ওদের পিছু পিছু। তোমাদের পৃথিবীতে তখন ভূমিকম্প সেরে গিয়ে থাকবে। আমার আর মনে নেই কিছু। দেখি অনেক দূর হতে কে একটা নিভন্ত উনান কাঁধে নিয়ে আমার পাশে এসে বসেন। আস্ত পৃথিবী নীরব হয়ে গেল। একে নীরব হওয়া বলে না, কী যে বলে এই নিরেট শব্দহীনতাকে! দেখলাম, আসলে ওই লোক নিভে যাওয়া উনানে নিস্তব্ধতা রান্না করছিল। একটা কেমন হাল্কা ধোঁয়া এসে নাকে লাগে। আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম।
দেখি, আরেকটু উঁচু হবে বলে নড়েচড়ে উঠছে হিমালয় । আজ ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১১ সাল। দেখি, তরতর করে গিরিশ্রেণি হতে শিহরণ নেমে এসে ভূমিকম্প হয়ে গেল।যেন, প্রচণ্ড মার খাবার পরে ঘরে এসে কাঁপছেন পিবি শেলি। তাঁকে ধরে ধরে সবাই মারতো তো স্কুলে। তারা বলতো, "Shelley-baits" বিচ্ছুরা শেলিদের মারে কেবল। কেন মারে। মারে। কারণ, একদিন শেলিকেই লিখতে হবে, ভালোবাসার দর্শন, ‘Love’s Philosophy’ (তোমাদের রবিঠাকুর এর নাম দিয়েছিল, ‘প্রেমতত্ত্বআর কী বিচ্ছিরি অনুবাদ করেছে!)    হঠাৎ দেখি সিনেমার পর্দায় যেমন, তেমনি আকাশে ভেসে ওঠে কিছু লাইনঃ
‘See the mountains kiss high heaven 
   And the waves clasp one another; 
No sister-flower would be forgiven 
   If it disdained its brother; 
And the sunlight clasps the earth 
   And the moonbeams kiss the sea: 
What is all this sweet work worth 
   If thou kiss not me?’ 
কে যেন নাড়িয়ে দিল। জেগে উঠলাম। কারা যেন কোথা হতে আমাকে উদ্দেশ করে কু, কুকরে চলেছে। এই শব্দটা শুনলে আমি রেগে যাই কিনা, তাই ক্ষেপায়, পাগল নাচায়। আসলে এরা কিছু একটা করে হাসতে চায়। আনন্দ পেতে চায়। তাই। এটা হল সদা বেইটসআজকাল রাগ করি ন, কারণ তুমি তো আছ।
তুমি আছ। যেমন পৃথিবীতে ঠিক কোথাও একটা দারুচিনি দ্বীপ আছে। চাঁদের জোছনা পরার সাজঘর আছে না কোথাও? যেমন তুমি সাজো, তেমনি চাঁদও ঘোর অমাবস্যার শেষে, সেই দৈব সাজঘরে গিয়ে জোছনা পরে আসে। আমি তাকিয়ে থাকি আকাশে, কেমন শারদবিভা। শিশিরের আয়োজন দেখিশিশির পড়ে আজকাল। যেন বাতাসের ক্ষয়রোগ হল।এই যে শিউলির কুঁড়ি, এই যে শিশিরপাত, এই যে ঈশ্বরের কারুকাজ, এসবের কী কাজ বল? কী কাজে আসবে এসব...
What is all this sweet work worth 
   If thou kiss not me?
আমি তাই চিৎকার করি। নিজের অস্তিত্বকে অসম্মান করি। তুমি শুনতে পাও? আমি নিজেকে ক্ষেপাই, ক্ষেপিয়ে তুলি। কু, কু। ইতি
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১১

তোমার একান্ত
সদানন্দ




মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৭

কু

অশোক দেব
কু
তুমি আমার লুম্বা। লুম্বা। এটা সদানন্দের প্রিয় গালি। কিন্তু যত গালাগাল সব বুকে বুকে। মুখে নীরবতা, আমতা আমতা এবং সর্বদা ভ্যাবাচেকা-খাওয়া একটা হাসি ঝুলিয়ে রাখে সদানন্দ
 না সদানন্দবাবু, আমার মনে হয় ড্রপ-আউটই লেখতে অইব।
  আমার লুম্বা লেখতে অইব। মনে মনে বলে সদানন্দ। অথচ পাঁচবার ইয়েকয়েকবার তোবারদুই না মানেএসব বলে, মুখে বলে, স্যার যে মাইয়ার বিয়া অইয়া গেছে, তারে ড্রপ-আউট স্টুডেন্ট দেখানডা কি ঠি অইব? তারে তো আমরা আর ডাইক্যা আইন্যা পড়াইতে পারতাম না। বিয়া অইয়া কই গেছে, কেডা জানে?
 তাইলে? প্রশ্ন করে হেডমাস্টার
— তাইলে লুম্বা গনো বইয়া বইয়া। তুমি হেডমাস্টার। তোমার পাডা তুমি গলা দিয়া বলি দেও, নইলে পাছা দিয়া, আমার কিতা? আবার নীরবে বকে দেয় সদানন্দ।
পড়াশুনো নিয়ে এই এক তুঘলকি চলছে আজকাল। ছাতার হেডমাস্টার, কিচ্ছু বোঝে না, জানে না কিছু। তার ওপর এই সর্বশিক্ষা অভিযান। আজ এক সার্কুলার আসে, কাল সেটা পাল্টে যায়। সদানন্দ এই প্রত্যন্ত এলাকার একমাত্র হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষক বিজ্ঞানের শিক্ষক, কিন্তু পড়াতে হয় ইংরেজি। তার ওপর আবার যাবতীয় অফিসিয়াল চিঠিপত্রের বঙ্গানুবাদ করে হেডমাস্টারকে বোঝানো এবং তাদের জুৎসই জবাব লিখে দেবার বাড়তি দায়িত্ব।
দুশ ছাত্রছাত্রীর এই বৈরাগীপুর হাইস্কুল। শিক্ষক হিসেবে সুনাম থাকলেও, সদানন্দ বিচ্ছু ছেলেদের কাছে কুমাস্টার। পথেঘাটে, বাজারে, যেখানেই সদা যায়, আড়াল হতে কেউ না কেউ আওয়াজ দেবেই — কু। শব্দটি শুনলেই মাথায় আগুন রে যায় সদার। প্রথম প্রথম, উদয়পুরে, পাড়ায় যখন এর সূত্রপাত হয়, শব্দটি শুনলেই সদা তেড়ে যেত। কীভাবে যে এ ব্যাপারটা প্রচারিত হয়ে সাব্রুমের এই প্রত্যন্ত এলাকায় এসেছে! এখন অবশ্য নিজেকে সামলে নিতে চেষ্টা করে সদা। সবসময় পারে না। কখনও কখনও হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। কখনও হেসে ওঠে জোরে জোরে। আবার মাঝে মাঝে প্রতিশব্দ করে — কু। তাতেই উৎসাহ পেয়ে যায় লোকে। সদা বোঝে। কিন্তু কোনওভাবেই এ শব্দটার আওতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না
প্রায় গৃহবন্দী জীবন তাই সদার। রবীন্দ্রসংগীত শোনা, গল্প কবিতা পড়া। আর অদৃশ্য অবাস্তব এবং স্বপ্নের প্রেমিকাকে চিঠি লেখা। এই তার যাপন। প্রায় চল্লিশ পেরিয়ে গেল। জীবনে প্রেম আসেনি সদার। বিয়ে হল না। পাঁচ দিদির পরে একটি ভাই সদা। বাড়িতে সারা জীবন সে কনিষ্ঠ। দিদিদের ভাই। তাদের বিয়ের পরে একজন করে অভিভাবক আরও বেড়ে গিয়েছেবড়দা, রাঙা, মিষ্টিদা, সোনাদা, ছোড়দা  সব জামাইবাবু। বাবা সারা জীবন অফিস আর কর্মচারী সমিতি করে কাটিয়েছেন। মা ঠাকুর ঠাকুর আর শুচিবায়ু নিয়ে। এখনও এই পঁচাত্তর বছর বয়সেও মায়ের শুচিতার দোষ কাটেনি। এর মধ্যেই দারুণ মেধাবী দিদিরা নিজেদের যোগ্যতায় সকলেই ভালো ভালো চাকরি করে। সবাই প্রেম করে আরও ভালো চাকুরির স্বামী নিজেরাই যোগাড় করেছে। সদার হল না। মেয়ে দেখা হয়েছে বহু। কিন্তু পারিবারিক মিটিঙে ভেস্তে গেছে সব। এ দিদির কাছে মেয়ের নাক পছন্দ হয় না, তো, সে দিদির কাছে স্টেটা জুৎসই লাগে না। তার ওপর জামাইবাবুদের নানারকম রসালো মন্তব্য যোগ হত, দেখা ও দ্রষ্টব্য মেয়েটিকে নিয়ে। এসব ছাপিয়ে আজ পর্যন্ত বিয়েতে যেতে পারেনি কোনও আলাপ।এখন ওসব বাদই দিয়েছে তাই।
সেই থেকে এই খাতাগুলিতে সদানন্দের প্রেমিকারা বন্দী। সে চিঠি লেখেঃ
প্রিয় শ্যামলী,
চাঁদ উঠেছে। তুমি এলে না, তবুও পূর্ণিমার চাঁদ কেমন সুডৌল। বাড়ি থেকে দূরে, এই গ্রামে, ভাড়া বাড়িতে আছি। মাটির ঘর। জানালার ওপাশে বিশাল মাঠধানের। মাঠজুড়ে শ্রাবণপূর্ণিমার চাঁদ। আকাশ জুড়ে চাঁদ উঠেছে ওই মাঠে। জানালার সামনে দিয়ে একটি জোনাকি একবার এদিকে একবার ওদিকে ওড়াউড়ি করছে। এই দুনিয়া-ছাপানো জ্যোৎস্নাতেও তার আলোটি দেখতে পাচ্ছি। একটুও ম্লান হয়নি সে। যতই বল, আলো আলোকে খাটো করে না। হয়তো নিজের মধ্যে মিশিয়ে নেয়। চাঁদের লোর কাছেও জোনাকির আলো নগণ্য নয়, একটুও। যেমন তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা, আমার প্রেম। দীপের আলোর মত যা আমাকে দীপ্ত করে ...
— কু, বাইরে থেকে কেউ আওয়াজ করে। কলম থেমে যায় সদার। তোর মারে কু... সদা মনে মনে বলে। তার ক্ষোভ কখনোই উচ্চারিত হয় নাবড়দি বলত, তোমার কারণে যাতে কারও কথা শুনতে না হয়। চুপচা যাইবা, চুপচপ আইবা। কোনও কথা না। কারোর লগে না’ সদা সেই থেকে একপ্রকার ক্ষীণবল হাসির অধীন। এ হাসি সর্বদা ঝুলে থাকে তার ঠোঁটে। এখন, বারদুয়েক তবুও, জোরে জোরে কু, কু শব্দ করে আলো নিভিয়ে দেয় সদানন্দ। বাড়িওয়ালির ঘর থেকে ছেলেমেয়েদের জোর হাসি শোনা যায়। মাদী মালকিনটাও হাসিতে যোগ দেয়।
মিষ্টিদা, জামাইবাবুদের মধ্যে সবচেয়ে হুল্লোড়বাজ। বিলোনীয়া বাড়ি। এখন উদয়পুরেও বাড়ি করেছে। বিয়ের ক’দিন পরে সদাদের বাড়ি এসে এক বেলার মধ্যেই পাড়ার ছেলেদের প্রিয়পাত্র হয়ে যায়। সবাই জামাইবাবু বলতে অজ্ঞান কিভাবে যে মানুষের সঙ্গে এমন মিশে যায় মানুষ! ক্লাবে ক্যারম খেলার আসরে মিষ্টিদার জয়জয়কার। ঘণ্টার পর ঘণ্টাসেবার ষষ্ঠিতে এসে দিদিকে বাড়িতে দিয়েই বেরিয়ে যায়। সদা কোথা থেকে আসছিল। ক্লাবের সামনে আসতেই ভেতর থেকে ডাকে মিষ্টিদা —
কু, সদা এদিকে আয়
সদা ক্লাবের ভেতরে যায়। জীবনে সেই প্রথমদিদিদের বারণ ছিল। দুটো বড় বড় পাতিলে দই এনেছে মিষ্টিদা। হাতে তুলে দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলল। সদা দইয়ের পাতিল নিয়ে বাইরে আসে। মুখে সেই ভ্যাবাচেকা মার্কা হাসি। একটু এগোতেই মিষ্টিদা আবার ভেতর থেকে ডাকে
 কু
সদা দাঁড়ায়, তাকায়। মিষ্টিদা হাতের ইশারায় কাছে যেতে বলে। সদা যায়।
— একটা মিষ্টি দই, আরেকটা টক। বড়দিরে কইস টক দই দিয়া মাংস করতো, কেমন?
সদা ঘাড় হেলায়। বেরিয়ে আসে। কিছুদূর যায়। ভেতর থেকে আবার শব্দ আসে  —  কু
আবার থামে সদা। তাকায় মিষ্টিদা জোরে জোরে বলে, আমি গিয়াই মাংসডা করুম, দিদিরে কইস। দই ফ্রিজে তুইল্যা রাখিস, আমি আইতাছি’
সদা এই র‌্যাগিঙে বিরক্ত হয়। তবুও ঝুলিয়ে রাখে হাসি। আর ঘাড় হেলিয়ে সম্মতি জানায়। হাঁটতে শুরু করে বাড়ির দিকে। আবার আওয়াজ আসে — কু। সদা দাঁড়ায়। ক্লাবের দিকে তাকাতেই সবাই একসাথে হেসে ওঠে। এবার আওয়াজটা করেছিল ক্লাবের একটা ছেলে, মিষ্টিদা নয়। ঠিক তার পরের দিন থেকে ক্লাবের সামনে দিয়ে যেতে গেলেই  —  কু। 
সদার জীবনে অভিশাপের মত যুতে যায় এই শব্দটি। প্রচারিত হয় প্রায় সারা শহরে। এখন নিজের শহর ছেড়ে এসে গেছে গ্রামে, কর্মস্থলে। শেয়ালের ডাকের মত বিচিত্র এই শব্দটি সদানন্দের মূল ধরে টান দেয়। সদা অসহায় হাসি ঝুলিয়ে রাখে মুখে।

দুই.
সকাল। ঝমঝমে বৃষ্টি হচ্ছে। শ্রাবণধারা। লুম্বা ঘরটা এইবার ছাইরা দিমু। টিনের কোথাও ছেঁদা হয়েছে সেই কবে। গতবার থেকে জল পড়ে। বাড়িওয়ালিকে বারবার নালিশ করেও কাজ হয়নি। প্রথমে এখানে আলনাটা ছিল। গত বর্ষায় সেটা সরানো হয়েছে। গত শীতেই চোরাই সেগুনের টেবিল কিনেছে একটা। সেটার স্থান হয়েছে ছেঁদার তলায়।ঘুম ভাঙতেই সদা ছুটে টেবিলে আসে। জল পড়ে ছেৎরে গেছে গতরাতের লেখা প্রেমপত্র। মেজাজ বিগড়ে যায়। মনে মনে। মুখে সেই হাসিটি ফুটিয়ে ছাতা বার করে বাড়িওয়ালির ঘরে আসে। আবার আমতা আমতা। জল-পড়া ছাতাটি হাতে নিয়েই ঘরে ঢুকে গিয়েছিল সে। ছাতা থেকে জল পড়ছে। বাড়িওয়ালিকে চরম কথা শোনাবে, এই ছিল ইচ্ছা। কিন্তু জল-ঝরা ছাতা নিয়ে ঘরে ঢুকতেই বাড়িওয়ালি খেঁকিয়ে উঠল, ‘বাইরে বাইরে, জল দিয়া ঘরটারে ভাসাইয়া লাইাতছে, দেহ, আক্কল নাই...
দুইবার সরি সরি বলে ঘরে ফিরে আসে সদানন্দ। টেবিলের উপর স্টিলের গামলা বসায় জল বরাবর। মনে মনে বলে, লুম্বা বেডি, ছাতির জলে ভাইস্যা যায় তুমার ... আস্তা ছাতি...
সদানন্দ আজ বাড়ি যাবে। উদয়পুর। তিন ঘণ্টার জার্নি। কাল স্বাধীনতা দিবস, পড়শু জন্মাষ্টমী, পরদিন একটা সিএল নেবে, তারপর দিন আবার মনসা পূজা উপলক্ষে লোকাল হলিডে। একেবারে রবিবার পর্যন্ত ছুটি কাটিয়ে আগামী সপ্তাহে স্কুলে আসবে। আজ মঙ্গলবার, পরপর দুটি ক্লাস করে সদা বাড়ি যাবে। মা এখন দিদির বাড়িতেই থাকে। বড়দিভাইয়ের কাছে। সদা বাড়িতে গেলে একা। দিদিরা বলে তাদের বাড়িতে থাকতে। সদা যায় না। নিজে রেঁধেবেড়ে খায়। ছাতে বসে একা একা মদ্যপান করে। আর আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকে। এটুকু বিলাসিতায় সদা কারও শাসন মানে না।
তিন.
একটা কাপড়ের ঝোলা সদার নিত্য সাথী। সাদা শার্ট আর ধুসর ট্রাউজার্স। পার্ক এভেন্যুর ট্রাউজার্স আর অ্যারো শার্ট। এ-সব দামি পোশাকের কৌলীণ্য থাকে না সদার কাছে। কারণ, সে সর্বদা একই রঙের পোশাক পরে। আর, ওই কাপড়ের ঝোলাটি তার পোশাকের মর্যাদা আরও ম্লান করে দেয়।
আজ সদার সিএল। সেদিন ইলিশ কিনেছে। আজ একটু মাংস নিতে হবে। বোতলও শেষ। আরেকটা নিতে হবে। হান্ড্রেড পাইপার্স। এখন বেলা তিনটা হবে। বোতলটা নেওয়া হয়েছে। সদা পিডাব্লিউডি অফিসের সামনে একটা টং থেকেই এসব কেনে। মদের দোকানে যায় না। তাছাড়া ওই কু-এর কারণে সদার বাজার হাট সবকিছুই বেপাড়ায় বেপাড়ায়, অসময়ে, যখন লোকজন কম থাকে। কিন্তু পিডাব্লিউডি অফিসের সামনে রীতিমত একটা ভীড়। এখন অনেক ছেলে ঠিকাদার হয়েছে। বেকার ছেলেরা দল বেঁধে ঠিকাদারী শিকার করে। ভীড়টা দেখেও সদা এগিয়ে যায়। এছাড়া আপাতত তার যাবার রাস্তা নেই। মুখে তার ম্লান হাসিটি আছে। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে কান বন্ধ রাখছে মনে মনে। হঠাৎই হৈচৈ বাড়ে। ভীড় বিশৃঙ্খল হয়ে যায়। সব কুড়ি থেকে তিরিশ বছরের ছেলে ছোকড়া। ঠিকাদারদের আজ কোনও টেন্ডার ফেন্ডার জমা দেবার ব্যাপার আছে হয়তো। একটু এগোতে পারলেই অটো স্ট্যান্ড। একা একটা অটো নিয়ে বাড়ি চলে যেতে চায় সদানন্দ। সহযাত্রী পছন্দ করে না সে। কারণ, কেউ না কেউ অটো থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে যাবার সময় হয়তো বলে গেল  — কু। সদার অভিজ্ঞতা আছে।
আচমকা উত্তেজিত হয়ে পড়ে ঠিকাদার ছেলেদের দল। স্পষ্টত দুইভাগে ভাগ হয়ে যায় তারা। লাঠিসোঁটা বেরিয়ে আসে। ইঁট ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু হয়ে যায়। ঝনঝন করে ভেঙে পড়ে অফিসের দোতলার কাচ। প্রচণ্ড শব্দে ফাটে একটা হাতবোমা। কোত্থেকে একটা পুলিশের জিপ স্পিডে এসে দাঁড়ায় এর মধ্যে। সদা রাস্তার একদম ধার বরাবর দ্রুত হেঁটে পেরিয়ে যেতে চেষ্টা করে। আরও কয়েকজন পথচারী ইতোমধ্যে তার পাশ দিয়ে চলে গেছে। সদা ছুটতে জানে না। পুলিশের গাড়ি দেখে প্রাণপণ পালাচ্ছে ছেলেরা। সদার একদম গা ঘেঁষে একটা ছেলে দাঁড়িয়েছিল। পুলিশ আসতেই তার ঝোলায় কিছু একটা গুঁজে দিয়ে পালালো। জিপ থেকে তড়িঘড়ি একটি পুলিশ নেমে সদাকে তাড়াতাড়ি চলে যেতে বলেই ছেলেদের দিকে ছুটল। পুলিশটি হয়তো সদাকে দেখেই বুঝেছে ঠিকাদারী ঝামেলায় সে নেই। অটো স্ট্যান্ডে এসে একটা অটোতে শেষব্দি উঠতে পারে সদানন্দ। অটোও পালাতে উদ্যোগ নিচ্ছিল। সদা উঠতেই সে ছুটতে শুরু করল।
লুম্বা ঠিকাদারি। লুম্বা টেন্ডার। এতক্ষণে, সদা টে পেল, তার হৃৎপিণ্ড গলায় আটকে ছিল ভয়ে। এখন হাল্কা হয়ে গালাগাল করে নিচ্ছে। মনে মনে। বৃষ্টির জলে ভাইস্যা যায় কোটি টাকার ব্রিজ। আমার লুম্বার উন্নতি। দুর্নীতি, দুর্নীতি। সদা প্রাণভরে গাল দেয়। মুখে সেই ভ্যাবাচেকা হাসিটি।
চার.
ঘরে এসে ঝোলাটোলা রেখে স্নান করে নিল সদানন্দ। আবার। জোরে চালিয়ে দিল গান। সন্ধ্যা হচ্ছে। দূরে গোমতীর কোলে নেমে যাচ্ছে সূর্য। ছাতে উঠে এসে তাকিয়ে আছে সদানন্দ পশ্চিমে। একা একা এই থাকার মধ্যেও একটা আনন্দকে বোঝার চেষ্টা করে। কোনও দুঃখ নেই তার। হয়তো আছে। সদা নিজেকে সান্ত্বনা দেয়, তেমন কিছু না।
সন্ধ্যা হয়ে গেলে ঘরে এসে ঝোলা থেকে সব বার করার উদ্যোগ করে। মাংসের পলিপ্যাক আগেই ফ্রিজে রেখেছে। রান্নার আগে একটু মদ্যপান করে নেয়া যাবোতল বের করে টেবিলে রেখে, ঝোলাটা হুকে তুলে রাখতে গিয়েই অবাক হয়ে যায়। ভেতরের জিনিসটা দেখে হতবিহ্বল হয়ে যায়। মেরুদণ্ডে জমে যায় বরফকুচি। একটা পিস্তলতাড়াতাড়ি রাস্তার দিকে জানালা বন্ধ করে দেয়। খাটের নীচে বাবার আমলের একটা ট্রাঙ্ক। সেখানেই ঢোকায় সেটাকে। ছেলেটা এই পিস্তল গুঁজে দিয়েছিল তখন!
উত্তেজনায় বড় বড় দু’পেগ হুইস্কি খেয়ে নেয় সে। মাথা টলছে। বড় আলোটা নিভিয়ে ছোটটা জ্বেলে দেয়। এবার ট্রাঙ্ক থেকে পিস্তল বের করে। ঠান্ডা। প্রায় দেড় কিলো হবে ওজন। গায়ে কোম্পনির নাম লেখা। ব্রাউনিং। ট্রিগারটা টানতে চেষ্টা করল সদা, না টাইট। এটা কি ভরা? লোডেড? এক হাতে বোতল, অন্য হাতে পিস্তল আর গ্লাস নিয়ে ছাতে আসে সদা। পিস্তলটাকে সিনেমার নায়কের মত তর্জনীতে ঘোরাবার চেষ্টা করতে করতে নেমে গিয়ে জল আর সোডা আনল। দুএকবার কাল্পনিক শত্রুর দিকে তাক করে গুলি ছোঁড়ার অভিনয় করল। ছাতে এখন একটু করে চাঁদের আলো ফুটছে। টেবিলের একপাশে পিস্তলটা রাখা। পা ছড়িয়ে একটা গার্ডেন চেয়ারে বসে ধীরে ধীরে পান করে হুইস্কি। মুখের হাসিটি ক্রমশ বদলে যাচ্ছে। জ্বলছে চোখ। একটু একটু করে গড়িয়ে যাচ্ছে রাত। রাতের খাবার খেয়ে পাশের বাড়ির কলতলায় কেউ মুখ ধোয়বারবার ওয়াক থু, ওয়াক থু করছে। বিশ্রী। মেজাজ বিগড়ে যায় সদানন্দের চিৎকার করে ওঠে সে, বাস্টার্ড, স্পিট অন ইয়োর মাদার্স কান্ট, ইউ ব্লাডি সান অব আ বিচ...বলেই অবাক হয়ে যায় সদা। এ কী করেছে সে? চিৎকার করে গালাগাল করেছে সদানন্দ?হঠাৎ খুলে গে জ্বালামুখ? সদানন্দ খুলে ফেলে লুঙ্গি। মাথার ওপর পিস্তলটা তুলে ধরে। সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করে, কু, কু। যেন চাঁদে-পাওয়া কোনও বুনো শেয়াল। ক্ষুধার্ত। রক্তপিপাসু। প্রতিশোধকামী।
ভোরের দিকে ঘরে নেমে আসে সদানন্দ। মাথায় তার পরবর্তী ছক আঁকা হয়ে গেছে। এক বীভৎস, ভয়ঙ্কর, ধ্বংসের পরিকল্পনা। পিস্তল হাতে উলঙ্গ সদানন্দ প্রথমে বড়দিকে ফোন করে
— হ্যালো বড়দি? লুম্বা স্টেটাস দেখাইলা এতদিন। ভাই কেমন আছে খবর নেও নি? সকালে বাড়িত আইয়ো। কথা আছে, ঠিক সাতটায় আইবা। স্বার্থপর কোথাকা
ফোনের ওপারে এক বিহ্বল নীরবতা। ধাক্কা খেয়ে বড়দিভাই একটু আমতা আমতা করল। সদার হাসি পেয়ে যায়তারপরই ফোন করা হল মিষ্টিদাকে, হ্যালো ... কু... আমি সদা। শালারপুত, ‘কুকইরা ডাকো তুমি আমারে? সকাল সাতটায় আমার বাড়িত আইবা, কথা আছে। লুম্বা গাড়ি কিনছো বলে’?
ফোনের ও-প্রান্ত জুড়ে অবিশ্বাস, কেডা...কেডা তুমি?’
 আরে আমি, কু, মোবাইল টু মোবাইল, নম্বর দেখ, শুয়োরের ছাও।
একে একে সবাইকে ফোন করে সদানন্দ। শেষ ফোনটা করে স্কুলের হেডমাস্টারকে, ‘এই বুরবক, মূর্খ, লুম্বা, আমি সদানন্দ কইতাছি। সোমবার ইস্কুলে যাইতাম না, জেলে যামু। তোর লুম্বা ইস্কুল তুই সামলাইছ, ক-অক্ষর গোমাংস, মূর্খ...তারপর একটু পায়চারি করে ঘরের ভেতর। সারা শরীর যেন ঘৃণার বাষ্পতাপে জ্বলছে। একটু মাথা ঠান্ডা করে নিতে চায় সদানন্দ। সবটা কাজই করতে হবে ঠান্ডা মাথায়। টিভিটা চালিয়ে দেয়। দিনরাত খবরের চ্যানেল। মাফিয়ার সঙ্গে কেন্দ্রীয় গৃহরাজ্যমন্ত্রীর ফোন যোগাযোগ দেখানো হচ্ছে সবিস্তারে। সদানন্দ আরও ক্ষেপে যায়। ভোর পাঁচটাতেও দুর্নীতি? টিভির দিকে তাক করে পিস্তল চালায়। চলে না। কোনও একটা মেকানিজম বুঝে উঠতে পারছে না সদানন্দ। সকাল সাতটার আগেই সেটা রপ্ত করতে হবে।
পাঁচ.
সাতটা এখনও বাজেনি। দিদিরা সবাই এসেছে। বাড়ির গ্রিলে ভেতর থেকে তালা। কেউ বুঝতে পারছে না। ছোট মত একটা ভীড়ও হয়েছে বাড়ির সামনে। পাড়ার লোকজন। সবার চোখেমুখে উৎকণ্ঠা। কাল রাতে নাকি প্রচণ্ড চেঁচামেচি করেছে সদানন্দ। একা একা। এরকম আর কখনও হয়নি। মিষ্টিদা সবার শেষে এসেছে। গ্রিল ভাঙা হল, দরোজা ভাঙা হল। মেঝেতে উবু হয়ে পড়ে আছে সদা। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে। হাতে পিস্তল। কে একজন বলল, টা নাগাদ গুলির শব্দ শোনা গেছে।

(গল্পগ্রন্থঃ সদানন্দের অসুখবিসুখ, ২০১১, অক্ষর পাবলিকেশনস, আগরতলা, গল্পটি ২০০৫ সালে রচিত)