তোমাদের জোছনাচারে আমারও আয়োজন ছিল। সারাদিন দড়ি টেনে টেনে দুগ্ধ ছেনে আমিও গৃহকাজ করে, শেষে বিকেলে সেজেছি। মেখেছি ধূপের ঘ্রাণ অনন্ত কেশরাশিতে। আকাশও কেমন ঘ্রাণময়ী হয়ে গেল, টের পাওনি! আমাকে বাঁধবার নেই কেউ। তাই ধ্বনিগোপন করি না, নূপুরের চিৎকার বাজিয়ে আসি তোমার কাছে, মাধব। আসি জগৎকে জানিয়ে। তুমিই জানো না যখন, জগৎ জেনে কী করবে! সারাদিন কাজের ফাঁকে হলুদ-চন্দন মেখেছি হাতের পাতায়— তেমন রম্য নয় তারা রাধিকার মতন। পোষা ময়ূরের থেকে ধার এনেছি সুনীল পুচ্ছ। জানি, তোমার কাজে লাগবে না সে। মানিনী অকারণ মান করে, তুমি জানো না। তুমি কি আর জানো না, মদনমোহন? জেনেই যাও নেচে দেখাতে। কী নাচ নাচবে তোমরা আজ, জানি। কত শর্ত রাখবে পরস্পর, কত উজ্জ্বল সুর বাজাবে তুমি বাঁশিতে। রাধিকাসঙ্গিনীরা বাজাবে কত উদ্ভট তাল। তোমরা নাচবে। নাচ করবে, বসুধা নাচবেন।
বসে থাকব, একাকী তমালতলায় বিগতপুষ্পের ঘ্রাণ হাতে নিয়ে। ছলকে ছলকে চন্দ্রালোক এসে পড়বে তোমাদের চুম্বনের ঠোঁটে। তোমাদের গাত্রবর্ণের সঙ্গে মিশে সে আলো আরও বিভাময়ী হবে। আমার গুপ্তবিভা তোমরা দেখবে না, কারণ আমার অন্দরে তোমাদের অধিবাস, তোমাদের তাবৎ লীলা, হে লীলাময়।
গোপিনীর বিরহ না খেয়ে কবে কোন্ গোপাল প্রকৃত শ্রীকৃষ্ণ হয়েছে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন