মঙ্গলবার, ২০ নভেম্বর, ২০১২

ফেসবুক থেকে শিক্ষা


ফেসবুক থেকে শিক্ষা
 
বন্ধুদেরকে তাদের নামের আদ্যক্ষর অনুযায়ী সাজাতে শিখিয়েছে ফেসবুক। তাদের জন্মদিন মনে রাখার কাজটুকু সে আমার হয়ে করে। ফেসবুক অনেক নতুন বাংলা গালিগালাজ শিখিয়েছে। অভ্র ডাউনলোড করে ‘ভাষা হোক মুক্ত’ বলে দেদার টাইপ করতে শিখলাম। যেসকল দেশে-রাজ্যে একবারও কখনও যাওয়ার যোগ্যতা হবে না, সেখানে বসেও দু-একজন বন্ধু আলাপ করে আমার সাথে। এই শ্লাঘা দিয়েছে। বুকের ওপর বই রেখে অলস দুপুর থেকে টেনে এনে কবিতার জানালার কাছে বসিয়েছে সে। এই জানালা দিয়ে পরলোক দেখা যায়।
মাঝে মাঝে গোল বেঁধে গেলে দূরে থাকতে শিখিয়েছে গুরুজন, ফেসবুক শিখিয়েছে গোলের মধ্যে হামলে পড়তে। ফেসবুক আমার দু-গলি পরের বন্ধুকে রাস্তায় নির্বাক ও ল্যাপটপে মুখর করেছে।
ফেসবুক থেকে মাঝে মাঝে বিষাদ ছড়ানো হয়। সে বর্ণহীনতা মনের ওয়ালে লাইকের ছলে অপমান রেখে যায়। তা নিয়ে দিনকয়েক কেটে গেলে, মোডেম থেকে নীল আলো বেরিয়ে আসে। লগইন। নটিফিকেশন। কত কী করে যায় বন্ধুরা আমার, যখন আমি অনুপস্থিত ছিলাম। এমন আমার ছায়ার পেছনেও বন্ধুরা অনেক করে। যেমন একেবারে চলে গেলেও মল্লিকা সেনগুপ্তের জন্যও জমে ওঠে অনেক নোটিফিকেশন। সেসব কী দেখতে পেয়েছে মল্লিকা?
আমাদের কান্না কি দেখতে পায় বিদেহী বন্ধুরা ?
দেহহীন, মুখাবয়বহীন মুখপুস্তকের পাঠ নিতে নিতে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নও ডেকে ওঠে ফেসবুক ফেসবুক। স্বপ্নের ওপারেই দুজন দুঃস্বপ্নব্যবসায়ী থাকেন। তারা স্বপ্নকে স্যাম্পল করে আসলে দুঃস্বপ্ন বিকিয়ে দেন। ফেসবুক আমাকে এই সত্য জানালো।
ফেসবুক আমার বাস্তব বন্ধুর চশমার কাচ থেকে শুষে নিয়েছে পাওয়ার। তার বাবার ক্যান্সারে একটু সমবেদনা জানাবার জায়গা রাখেনি ফেসবুক। ফেসবুক আমার, হে মায়াপুস্তক, তোমার মুখ আছে, অভিব্যাক্তি নাই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন