সদাপুরাণ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
সদাপুরাণ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

সদাপুরাণ-২৪



অশোক দেব
সদাপুরাণ-২৪

গপিস্ট কি সত্য বলেন নাকি মিথ্যা? তাঁর মতে সত্যনারায়ণ একাধারে হিন্দুর দেবতা আবার মোছলমানের পীরযা-ই হোক, এখন জোছনাকে লাগছে সত্যনারায়ণ পূজার সিন্নির মতনআকাশ হতে কুয়াশার পাত্রে পরিবেশিত হচ্ছে জোছনা যেন প্রসাদ। মনের মতন করে সাজানো নৌকাটি পেট ভরা আনন্দ নিয়ে ভাটির দিকে যাচ্ছে। নদীর যেটুকু প্রবাহ, সেটাই তার গতি। হাল ধরে আছে মাধব। সে কি পুরুষ না খোজা কেউ জানে না। কেবল মুচকি মুচকি হাসে। সেই হাসিটুকু ছাড়া আর কোনও ভাষা জানা নেই তার? তবে সে নদীর ভাষা জানে। নদীকেই সে মাগী বলে। আর কাউকে মন্দ বলে না। খায় কী যেন সারাক্ষণ। কী যেন চিবাতে থাকে। মুদ্রাদোষ। ‘মাধবাদা, সারাদিন কিতা চাবাও?’ মাধবের বাঁধা উত্তর, ‘লাইফ’হয়তো সে একটিই ইংরেজি শব্দ জানে। হাল ধরে আছে। মুচকি মুচকি হাসছে আর লাইফ চিবুচ্ছে। এ ছাড়া নৌকা কেউ বাইছে না। বৈষ্ণবীর চর হতে এসেছে নিখিল। নৌকায় মানুষ নেই। সকলে ঘুঙুর। এমনকি নৌকাটি নিজেও। নিখিলও ঘুঙুর, আগে জানতাম না জোছনা এসে নদীর দুপারে হঠাৎ গাঢ় হয়েছে। পাড়ের একেবারে ধার ঘেঁসে যে জোছনা সেটি হাল্কা। তার সুর আকাশের সঙ্গে মেলানোইতিউতি শেয়াল আছে। ছোট ছোট ঝোপ হতে মুখ বের করে। আবার লুকিয়ে যায়। নিশ্চয়ই আছে কোনও পেঁচা ওই যে অশ্বত্থ গাছে। তার কাছে আঁধার আর জোছনায় ভেদ নেই। সে-ও আসলে ঘুঙুর। একটা কোম্পানি চেয়ারে বসে আছেন গপিস্ট বুড়া। এটা কোন এক চা বাগানের ম্যানেজারের ছিল। চেয়ারটা গপিস্টের পছন্দ হলে নিয়ে আসেন। তিনি যা চান, সেটা চান। চেয়েছেন মানে হাসিল করেছেন। প্রাণকৃষ্ণ আচার্য এসেছেন। তিনিও ঘুঙুর। গান গাইবেন। দূরে দূরে মানুষের বাড়িঘর এখন আলয় হয়ে আছে। ছোট ছোট আলো। জ্বলতে হবে বলে জ্বলে আছে। গপিস্ট চারদিকে তাকান না। চোখ বুজে থাকেন। জরিনার মানা পেরিয়ে মজিদভাই আসতে পারল না। আমি এলাম। আমার জন্যও একটা বাহারি চেয়ার এসেছে। বসে আছি। সত্যই বলেন গপিস্ট। নদীর নিজস্ব গান আছে। জল হতে উত্থিত একটি শব্দও আসলে নয়েজ নয়। মিউজিক। যাত্রীরা সব একটা আনন্দ পরিধান করে আছে। আমার কেবল মনখারাপ। কেন মানা করেছিল জরিনা? এ নৌকাটা কি মৃত? নৌকার শবদেহে বসে ভেসে চলেছি আমরা? যেমন মৃত গবাদির বহমান শরীরের ওপরে বসে ভেসে যায় শকুন।
          এখন ছাতারিয়া গ্রাম পেরিয়ে যাচ্ছি। আগে ওই গ্রামে যাবার একমাত্র উপায় ছিল সাঁতরে যাওয়া। সাঁতারিয়া। সেই থেকে ছাতারিয়া। বাঁদিকে বৈষ্ণবীর চর। অনেক অতীতকালে গোমতীর নিজের খাতবদলের দরকার পড়েছিল। যেমন সর্পিণীর খোলশ পাল্টানোর প্রয়োজন হয়। গোমতী তাই একটা মড়াগাঙ ফেলে রেখে এইখানে চলে আসে। সেই খোলশ ছেড়ে এই পশ্চিমে আসার সময় নদী বিশাল এক চরা প্রসব করেছিলনতুন সেই চরায় কোথা হতে এক বৈষ্ণবী আসে। আখড়া গড়ে। সূর্যাস্তের মতন গায়ের রং ছিলো তার। ক্ষীপ্রতায় তিনি পানক সাপ। তার আখড়ায় অচেনা ছেলেরা আসে। তারা সারাদিন ঘুমায়। রাতে জাগে। রাত জেগে কী সব করে। এইসব কথা গপিস্টের কাছে শোনা সত্যমিথ্যার মালিক ওই গপিস্ট, রহিম মিয়াঁ। তিনি বলেন বৈষ্ণবী আসলে অনুশীলন সমিতির লোক ছিলেন। আর ছেলেরা রাত জেগে অস্ত্রচালনা শিখতো। রাজা সব জেনেও বাধা দিতেন না। সেই হতে এই এলাকার নাম বৈষ্ণবীর চর। বৈষ্ণবীর চরের নিখিল পাল আসলে নাকি ব্যর্থ প্রেমিক। এখন ঘুঙুর আর প্রাইমারি টিচার। গান গায় এমন যেন সে গানের সঙ্গে সঙ্গম করছে। তাই করে করে ব্যর্থ প্রেমের শোধ তোলে নিখিল।
          সোনালীর মা তার রূপের স্মৃতিচিহ্ন হয়ে যাননি এখনও।  দক্ষিণ স্তনখানি একটু দেখিয়ে শাড়ির আঁচল সাজানো। যেন আঠা দিয়ে লাগিয়ে রাখা ওই শাড়ির পাড়একটুও সরে না। সরলেই যেন আঁচলকে শাস্তি দেওয়া হবে। সোনালীর মা-ই নৌকার সকল নারীদের নেত্রী।  এরা সবাই মিলে গোমতীর ঢেউয়ের সঙ্গে কী একটা মিশিয়ে দিয়েছে আমার খুব নেশা হচ্ছে। কেমন তন্দ্রা পাচ্ছে কামরাঙাতলী পেরিয়ে যাচ্ছে নৌকা। গপিস্টের পায়ে একরকমের মোজা। না হ্লুদ, না লাল। না সুতা না উল। এ যেন কী দিয়ে তৈরি। কেউ এসে গাঁজার কল্কি তাঁর সে মোজায় ছুঁইয়ে নিচ্ছে। কেউ এসে মদের পাত্র। সোনালীর মা ব্যস্ত। মেয়েরাই এসবের প্রধান ব্যবস্থাপক। ‘আরেট্টু গেলেই তো কুর, মনে আছেনি রে মাধব’গপিস্ট হাওয়ার মধ্যে বলেন। মাধব লাইফ চিবানো একটু বন্ধ রাখে। হাসিটি আছে। ‘আমরা কুরের কাছে গেলে এনা কুর। না গেলে কিয়ের কুর? আমনে আমারে নি শিখান গুমতির ঢং? মাগীরে আমি তিলে তিলে চিনি’কামরাঙাতলীর বিস্তীর্ণ মাঠ পেরিয়ে বাঁদিকে হঠাৎ একটা টিলা। ওপরে মাটি নীচে পাথর। সেখানে এসে গোমতী বাঁক নিয়েছে। আর প্রায় তিন কিলোমিটার ব্যাপে একটা ঘূর্ণি গড়েছে। কুর। জল ঘুরে ঘুরে কেবল নীচের দিকে চলে যায়। টেনে নেয়। মাঝিরা এখানে সাবধান থাকে। কারা যেন নদীর পাড়ে বাঁশের মাথায়  লণ্ঠন বেঁধে রাখে। এখন নেই। মহারানি ব্যারেজ হবার পর নদীতে আর নৌকা চলে কই?
নিখিল গাইছেঃ
‘দেখবি যদি সেই চাঁদেরে
যা যা কারণ সমুদ্রের পারে
।।
যাস নে রে মন সামান্য নৌকায়
সেই নদী বিষম তড়কায়
প্রাণে হবি নাশ, থাকবে অপযশ
পার হবি যদি সাজাও প্রেমের তরীরে
।।
তারণ্য কারণ্য আড়ি
যে জন দিতে পারে পাড়ি
সেই বটে সাধক, এড়ায় ভবরোগ
বসতি হয় তার অমর নগরে’
।।

          আমার নেশা হচ্ছে? কিসের নেশা? চোখ বুজে আসছে। সোনালীর মায়ের গায়ের গন্ধেই আমার এই নেশাটা হচ্ছে? নাকি তার কথা শুনে, ‘হগলে মনে করে আমি নিরক্ষর। না। হগলে মনে করে সোনালীর বাপ আসলে সোনালীর বাপ। না। সোনালীর বাপ আসলে এক চেডেরবাল খানসেনা। আমি তহন ষোলো বছর পার অইয়া গেছি। বাপের চোখের মণি আছিলাম। বাড়ির থিকা তুইল্যা নিল আমারে। বাপে টেকা সাদলো, সোনা সাদলো, খানে নিল না। আমারে নিল। সারা রাইত আমারে বারে বারে, বারে বারে... সকালে আমি একটা লেংডা। দেহনের মতন জিনিস। খানসেনার থিকা খারাপ হেই মানুষের গোল অইয়া দারাইয়া থাহন। দেখন। কেউ মাথা নোয়াইয়া দেহে আমার নীচে দিয়া রক্ত পড়েনি... আমি কুমারী আছলামনি... আমার বাপে আর আইলো না। বাড়ির থিকা কেউ আইলো না। আমি য্যান ক্যামনে এই দেশে আইছি... ঘুমাও নিকি’?
- না, কন
- আমি তোমার ঘরে যাই। তোমার হাতের লেখা তো বিরইন ধানের মতন। আর কী সোন্দর হগলের কতা লেইখ্যা রাহ। হুনো, মাইনসে কু কু করলে গাও মাখবা না... এমন বহুত কু আমি হুনছি। অহন যে শরিলে শরিল নাই, অহনও হুনি। জগতে তুমি যত দুব্বল অইবা, জগৎ তত খানসেনা অইব। কেউ রক্ত বাইর করব, কেউ নুইয়া দেখবো রক্ত বাইর অয়নি... তোমার লেখা বড় ভালো লাগে বাপ... তুমি আমাগো রবিন্ডনাথ।
          আমার চোখ বুজে আসছে। কে যেন ঠিকই ঝুলিয়ে রেখেছে একটা লণ্ঠন নদীর পাড়ে। আকাশপ্রদীপের মতন। দুলছে আলো টা। সজুর ভোমা ঘুড়ির কথা মনে পড়ে। সে-ও একটা ছোট লণ্ঠন আকাশে দুলিয়ে দিতো ওই বিরাট ঘুড়ির সঙ্গে বেঁধে। আর সেই টুইল সুতার একঘেয়ে  একটানা শোঁ শোঁ শব্দ। কে দুলছে এখন? লণ্ঠন নাকি নৌকা? কোথা হতে শব্দটা আসছে? কে যেন এত আনন্দ, এত বাদ্যযন্ত্র, এত এত গানসমেত নৌকাটাকে টানছে। কে? একটা আলোর টানেলের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে একটা নৌকা। একটা না-পুরুষ তার হাল ধরে শূন্যতা চিবিয়ে চলেছে। কে যেন গান গাইছেঃ
‘মায়ার গিরাপি কাট
ত্বরায় প্রেমতরীতে ওঠ
কারণ সমুদ্রের নাও, পার হয়ে হুজুর দাও...’
          ধীরে ধীরে সে গানও যেন কোথাও ডুবে যাচ্ছে। একটা রমণীয় ঘ্রাণ ছড়িয়ে সোনালীর মা তার ডানস্তনের কিছুটা ভাস্বর করে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমার লেখা ভুলে যাওয়া কবিতা সে বলে। গড়গড় করে বলে। আমি কেন লিখেছি সেসব? নেই এমন এক নারীকে আমি চিঠি লিখি। সোনালীর মা সেসব থেকে গড়গড় করে বলে। শেষে বলে, ‘বুজলা রবিন্ডনাথ, এমুন কেউ মাইয়ালোক আসলে থাকলে তোমার লেখতে মনে লইত না। তুমি একলা থাহনের জাদুডা শিখ্যা লাইছো...’
          আমি একা হয়ে যাই। সর্বস্ব মিথ্যে হয়ে যায়। সোনালীর মায়ের গায়ের ঘ্রাণে কে যেন জল মিশিয়ে সোঁদা করে দিচ্ছে। এমন তীব্র সে গন্ধ যে, আমি শ্বাস নিতে পারছি না। তারপর আর কিছু মনে নেই।

          সকাল। মাথা ধরে আছে। অনেকক্ষণ লেগে গেল এটা বুঝতে যে আমি আছি মেলাঘর হাসপাতালে।

‘ইয়েস’ বলে লাফিয়ে ওঠেন নন্দ দারোগা। ‘ইয়েস, একটা নৌকাডুবি হইসলো, থ্রি ডেড, ওয়ান মিসিং... ইয়েস... যামুগা, যামুগা... ইয়েস, ইট ওয়াজ রহিম দ্যা গপিস্ট... ইয়েস, হি ওয়াজ মিসিং...’




রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৭

সদাপুরাণ -২৩



অশোক দেব
সদাপুরাণ -২৩

নীচে ঢেউয়ের প্ররোচনা থাকতে হয়। নইলে মরে যায় বেঁধে রাখা নৌকা
োমতী এখন হীনতোয়া হয়েছে। মহারানি ব্যারেজ থেকে বিকেলের দিকে একটু জল দেয়। সেই জলে গোমতীর না সাজ হয়, না বাহার। ঘাটে গপিস্টের নৌকা। বাঁধা। বহুকাল। মাঝে মাঝে তাঁর হাছনরাজা হবার শখ চাপতো। নৌকায় দিন কাটাতেন। রাতই কাটাতেন বেশি জোছনার রাত। গানবাজনা হত। সঙ্গে চলতো তাঁর গপের আসর। সত্যই বলতেন, নাকি বানিয়ে, বোঝার উপায় নেই। এখন আর হাছনরাজা হওয়া হয় নাএকটু গিয়েই বালিতে আটকে যায় নৌকা।বহুদিন পরে আজ তাঁর শখ হল। যাহোক একটু নৌকাভ্রমণ করতে চান খাওয়াদাওয়ার বিশাল আয়োজন নৌকায় তোলা হবে। সকাল থেকেই রান্নাঘর সরগরম। আর এইদিকে ওই মোরগ নিয়ে লেগেছে ধুন্ধুমার। শান্তি বণিক ব্রয়লার ফার্ম করেছে। সে কয়েকটা মোরগ নিয়ে এসেছে। আজ বিক্রি করবার সুযোগ।
- ইডি কি রাতা মোরগ?
- একদম। রাতা মোরগ। মুরগি না।
- রাতা অইলে বেডাগিরি কই?
- আরে জেডা, এই রাতা হেই রাতা না
- তইলে ইডি কী রাতা?
- এই মুরগা হিতা করে না। কেবল মাংসের লিগ্যা পালি
- কিতা করে না?
- আমনে বুজি বোজেন না? রাতি মুরগীর কাছে যায় না
- হিজড়া?
- ধুর বেচতাম না
আমনের কাছে বেচতাম না মুরগা
- এই হুন, কই থিকা আনছস এই বালমার্কা মুরগা?
শান্তির মুখ কালো হয়ে যায়। সে কী করবে বুঝতে পারে না। ওইদিকে মহা ধুমধাম। নৌকা সাজাতে হবে। একটা বড়সড় বাদামবিহীন নৌকা এটা। ওপরে শামিয়ানা টাঙানো হয়।অস্থায়ী একটা ঘরের মতন বানানো হয়।কাপড়ের আড়াল। তাতে টেবিল চেয়ার। খাওয়াদাওয়া আর গানের আসরের জন্য অপ্রশস্ত একটু জায়গা।মজিদভাইয়েরও বেশ উৎসাহ। সকল কিছু যোগাড় করে ঘাটে নিয়ে যেতে
এদিকে মোরগের ঝামেলায় ডাক পড়লো আমার।
- সদামিয়াঁ, ইডি কী জাতের মুরগা?
- ইডি আসলে ক্রস। ওই জার্সি গরু আছে না? তেমন।
- ও বুজ্জি। বৈজ্ঞানিক কইরা বানাইছে?
শান্তি উৎসাহিত হয়
ইডিরে কয় ব্রয়লার। শুধু মাংসের লিগ্যা পালি। আমনেরে দেখামু।
- কী দেখাবি? চল দেখুম
- চলেন, ছাতা, আমনে বেশি করেন, অহনই চলেন।
- চলেনসেন সদামিয়াঁ, একটু দেখি মুরগার কী কারখানা খুলছে এই শাইন্তা

আমার বিশ্বাস হয় না। রহিম মিয়াঁ কথায় কথায় কারও বাড়ি যান না। কিন্তু এখন তো ঠিকই উঠে পড়লেন। হাঁটতেও শুরু করলেন ওইদিকে। শান্তি হা-হা করে ওঠে। ‘আমনে কি ঠিকই যাইবেন?’
- এই, আমি কি গপ মারিনি তোর লগে? চল।
শান্তি ছুটে আগে আগে চলে যায় বাড়ি। জানে, রহিম মিয়াঁ বড় সহজ কথা নয়। আগে এটা আলপথ ছিল। এখন ইটের সলিং। রহিমের নাগরাই চটি। কেমন করে এমন চকচকে রাখেন কে জানে! চটপট হাঁটছেন। শান্তির বাড়িটা ওই। একটা মাঠ পেরোতে হবে। এখানে আগে আখের চাষ হত। এখন কেউ কিছু করে না। ছেলেরা ক্রিকেটের জন্য তৈরি করে নিয়েছে। রহিম মিয়াঁ কোনাকুনি পথ ধরেন। সোজা শান্তির বাড়িতে ঢুকে গেলে শান্তির মা এসে রহিমকে জড়িয়ে ধরলেন। যেন কতকালের সখ্য। যেন নিজের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলবেন বুড়াকে। ‘অইছে, অইছে, রহিম মিয়াঁ অতিশয় স্নেহে বলেন।
- অইয়া গেছে?
- ধুর নডি, তুই আর ঠিক অইলি না...
এমন হাসি আমি বহুকাল শুনিনি। দুজনে হেসেমিশে যাচ্ছেন। বৃদ্ধদের হাসিতে কেমন অতীতকালও যোগ দেয়। তাই এত সুন্দর, এত আনন্দময়।একটু দূরে শান্তির বাবা। তাকে উদ্দেশ করে রহিম মিয়াঁ বলেন, ‘কিতা রে, ঠাণ্ডা অইয়া গেলি? হেই বেডাগিরি কই? তাই তো আগের মতই
’ প্রথমে একটু ফুঁপিয়ে, তারপরে সশব্দে কেঁদে ওঠেন শান্তির মা। হঠাৎ। ‘আমনে ভগবান, আমনে ভগবান’।
- এই বালের লিগ্যাই কারও বাড়ি যাই না। চুপ কর। চুপ কর। সর, তোর পোলার মুরগার কারখানা দেখতাম আইসি, কই?

     একটা বাঁশের বেড়ার ঘর। মাচার ওপর। চারদিকের বেড়ায় বরফি বরফি ফাঁক
ভেতরে পার্টিশন। একদিকে ছোট মোরগ। একদিকে একটু বড়। প্লাস্টিকের কয়েকটা উলটো কলস। নীচে একটা বাটির মতন লাগানো। কলসের জল এসে তাতে জমে। সে জল প্রাণপণ খেয়ে চলেছে কয়েকটা মোরগ। প্লাস্টিকেরই সাদা পাত্রে কী জানি কী খাবার। কয়েকটা মোরগ খাচ্ছে। প্রাণপণ। একটা গন্ধ আছে, ওষুধ ওষুধ। বাকিগুলো হাঁপাচ্ছে। ওপরে সিলিং ফ্যান ঘুরে চলেছে। কয়েকটা হলুদ বাল্বও আছে। দিনেই জ্বলছেরহিম মিয়াঁ যেনো নেই। একটা মানুষ এমন নীরব কী করে হয়ে যায়! বহুদূরের স্টেশন থেকে যেমন রেডিওতে কথা আসে, তেমনি করে তিনি বলেন, ‘শান্তি, মুরগা এমন হেতায় কেরে রে?’
- ওজনে। নিজের ওজনে নিজেই দাঁড়াইতে পারে না। দুমদাম ওজন বাড়ে তো... শ্বাস নিতে পারে না।
- ভোরে ডাকে?
- না
- মুরগী লাগে না হেরার?
- না
- কাইজ্যা করে?
- না
- বাইর হয়? চরে?
- না
- তাইলে তো মরা। এই শোভা...
ছুটে আসে শান্তির মা,‘কন কন’
- তোর পোলা মরা মুরগা পালে... দেখস না?
- বন্ধ কইরা দিব?
     শান্তি ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। মা এমন ভাবে বলছেন, যেনো, রহিম বললেই সব বন্ধ হয়ে যাবে
সে মায়ের দিকে তাকায়। এইসব দেখেশুনে কিছুই বুঝতে পারি না আমিএইবার কথা বলেন শান্তির বাবা। একই কথা, ‘আমনে কইলে বন্ধ কইরা দিব’।
- মানুষ কি কেবল খাইতে আইয়ে জগতে? কেবল খাইতে? এইসব জিন্দা পরাণ থিকা পরাণডা খুইল্যা কেবল মাংস থুইয়া রাখছে। বৈজ্ঞানিক কইরা কী অইব? মুরগা সারা বাড়িত হাটবো, খেলবো, প্রেম-পরিণয় করবো।সংসার করবো। ডিম পাইরা জগতেরে জানাইয়া চিল্লাইবো মুরগি... ভোরবেলা রাতা মুরগা সুইজ্যের দিকে চাইয়া চিল্লাইবো। য্যান সুইজ্যবেডারে সেলিউট দেয়, দেখস না?
- ঠিকই তো। ঠিক।
- কী ঠিক, শোভা? তোরে একটা কতা কই?
- কন, কন যা কইবেন হুনুম
- যামুগা
- ইতান কইয়েন না দাদা... আমনে আছেন আমরা আছি... হায় হায় রে, শান্তি, তুই ইতান কী ব্যবসা ধরলি... ইতান বন্ধ কর...
- শোভা
- না, না। আমনে কন খালি, ইতান বন্ধ কইরা দিব। ওইরে, শান্তি... এই বেডা কেডা জানস না। তোরা জানস না।
আর কিছু বলেন না রহিম। হনহন করে চলে আসেন। আমি থেকে যাই। একটু কেমন বিহ্বল চেয়ে থেকে একটা মোড়ায় বসে পড়েন শোভামাসি। শান্তির মা।
- মাসি
- হ বাবা কও
- তাইনে কেডা?
- ভগবান
- ক্যামনে?
দুদ্দাড় করে উঠে ঘরে চলে যান শান্তির মা। শান্তির বাবা এগিয়ে এসে বসেন। ‘আমরার শরিকি কাইজ্যা আছিলো। বাংলাদেশে। একচেইঞ্জের সময় জেডারে পাডাইলো বাবা। জেডা এদিকে সব ব্যবস্থা করলেন। আইয়া দেখি আমরার লিগ্যা কেবল চর। চরে বালু ছাড়া কিছু নাই। বাড়ির জাগা যিডা দিলো, হিডা আসলে কবরখলা। গর্ত করলেই মাইনসের হাড্ডি উডে। আমি বাবা, আমরা ছুডু ছুডু দুইডা ভাই, আমার সংসার...  তবু কবরের উপরেই বাড়ি করলাম। দুইদিন পরপর কাইজ্যা। জেডাতো ভাইয়েরা আগুন লাগাইয়া দেয়। আমি কুনুমতে আবার ঘর করি। তারা আবার আগুন লাগায়। থানা পুলিশ। কুনু কিছু দিয়া কুনু কিছু অয় না। রহিমভাই এই জাগাটাত থাকতে দিল। লগে ওই দুইকানি ক্ষেত। আইজ পইয্যন্ত কিছু চাইলো না। না টেকাপইসা, না ফসল’।
- আইচ্ছা আমি যাই। আজগা হাছনরাজা অইবো।
- ঘটনা কী? মুরগার ফার্ম দেখতে আইসে কেরে?
- ওই শান্তি গেছলো, মুরগা বেচতো, তাইনে ব্রয়লার মোরগ আর দেখছে না
- ও, তাইনে কি তাইলে মানা করলো?
- আমার তো মনে হয় না। আইচ্ছা মেসো, আমি যাই।
 আমাকে কিছু না বলেই উঠে ঘরে চলে যান শান্তির বাবা।

     ওই তো গোমতী। ঘাট। একটু দূরে একটা জারুল গাছ। নদীকে স্পর্শ করাই তাঁর উচ্চাশা। ফলে কাণ্ড হতে সবটা শরীর নদীর দিকে বাড়িয়ে
ফাল্গুনে এর ফুল আসে। বেগুনী। এখন নেই। নীচে একটা জল মেশানো ছায়া হয় তারছায়াটা আছে। এদিকে একটা ঢাল। চিত হয়ে শোয়া যায়। যেন হাসপাতালের একদিক উঁচু করা বিছানা। আপাতত ওখানে শুয়ে থাকাই ইচ্ছা। এসে দেখি মজিদভাই। আমি যেমনি ভেবেছি, তেমনি শুয়ে আছে। পাশে তার সরাইল্যা। কাছে যাই। পাশে শুয়ে পড়ি। একটু একটা রোদ পাতার ফাঁকে এসে তার বুকের ওপর খেলছে। নদী যেন নিজের ভার নিজে বইতে পারছে নাক্লান্ত তার জলপ্রবাহ। দূরে পশ্চিমে খুব সন্তর্পণে সূর্য ডোবানোর আয়োজন হচ্ছে এখুনি। নৌকায় সব তোলা হয়েছে। সবাই ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। কেউ বিড়ি টেনে নিচ্ছে বেশ করে। গপিস্ট বুড়া এলে আর টানতে পারবে না। নৌকা থেকে নেমে আসছে জরিনা। দেখি। নৌকা থেকে পাড়ের মাটি অব্দি একটা কাঠের পাটাতন শোয়ানো। একজন তাকে হাত ধরে ধরে পার করে দিচ্ছে। নামতে গিয়ে আমাকে হাতছানিতে ডেকে দাঁড়িয়ে পড়ে জরিনা। আমি উঠি। কাছে যাই, ‘কন’
- নৌকাডা মরা
- ইডা কী কতা?
- আমনে যাইইয়েন না নৌকাত। আমনের ভাইরেও মানা করেন।
- রহিমজেডা?
- তাইনে যাক। তাইনে তো যাইবোগা... 

রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৭

সদাপুরাণ-২২


অশোক দেব
সদাপুরাণ-২২

রক্ত ভারি অয়। সব শিরা ঢিলা অইয়া যায়। চক্ষের আর দেখবার ইচ্ছা থাকে না। দুনিয়াত হুননের মতন কুনু কথা থাকে না আর
মন নতুন কিছু নেয় না।  মনের মিধ্যে জাগা থাকে না আরমন ঘামাইয়া যায়। দেখবেন বাইচ্চা অইলে নতুন নতুন কেবল ঘুমায়। ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া কার লগে জানি হাসে। কেবল হাসে। ঘুমের বাইচ্চা খিলখিল কইরা উডে। আবার ঘুমাইয়া যায়। তারে আল্লামিয়াঁ কতকিছু খেইল দেখায়। কয়, এমন এক জাগা আছে কেবল জল। যত দূরে দেখবা কেবল জল। হিডারে কয় সাগর। ঘুমের বাইচ্চা বিশ্বাস করে না। হাসে। আল্লামিয়াঁ কয়, এমন একটা জাগা বানাইছি কেবল বালুযতদূর দেখবা কেবল বালু। শিশু মানে না, হাসে। তবু তার ঘুম ভালা লাগে। যা দেখেনাই, যা হুনেনাই, তা দেখনের লিগ্যা, তা হুননের লিগ্যা ঘুমায়। সারাদিন ঘুমায়। আমারও ঘুম আইয়ে। অহন আমি আর বাইচ্চা নাই। সাগর দেখসি না, তবে সাগর আছে। মরু দেখসি না, তবে আছে। জানি। যারা দেখসে তারা কয়। আমিও যা যা পারলাম দেখলাম, হুনলাম। অহন পুরান অইছি। ঘুমের নিশা অয়। ঘুমের মিধ্যে দেখি ওই দেশ। হেই দেশে  হাতে পরাণ লইয়া মানুষ মানুষের দিকে দৌড়াইয়া যায়। বাইচ্চা ঘুমের পিডে চইরা জগতে আইয়ে। আমি বুড়া ঘুমের উপরে চইরা দুনিয়ার থিকা যাইগা।
- আমনে না ঘুমাইতে ঘিন্না করেন?
- করতাম
- অহন?
- ওই যে কইলাম, কতা বোজেন না?
- বুজি
- সদামিয়াঁ
- কন
- যামুগা
- কই যাইবেন?
- ওই যে পক্ষীডা ডাকে হুনেন? ওই যে, টুবুর টুবুর... টুবুর টুবুর... হুনেন? ওইখানে যামু
- ইডা তো ওই তো, কামরাঙা গাছে বইয়া ডাকতাছে
- এই তো বুঝলেন না। আমনে হুনতাসলেন? আমি কওনের আগে পক্ষীডার ডাক আমনে হুনতাসলেন? হুনেননাই। কিন্তু ওইডা তো আছিলো। আছিলো না? আমনে জানতেন না কই আছিলো।হারাদিন তো খাইলো দাইলো, যদ্দুর উড়নের উড়লো। অহন ওই গাছে বইছে। আছে কিন্তুক নাই। ডাকে কেবল ডাকে, বিশ্রাম নাই... কেবল ডাকে... জিকির দেয়, আমনেরা য্যান কন জপ... পক্ষী জপ করে। একটাই কতা বারবার কয়... আমিও একটা কতা অহন কেবল কই... যামুগা, যামুগা, যামুগা... একটা কতা বারবার নিজেরে কইলে কতাডাই আমনেরে চালাইবো। হারাদিন উড়বেন, খাইবেন দাইবেন, একটা সময় বইয়া ওই পক্ষীর মতন একটা বালা কতা বারবার কইবেন...
- তাইলে কী অইব?
- আমনে বালের নি শিক্ষিত? কিতা বোজেন?
- না, মানে একটা কতা বারবার...
- এই নাটঢিল, আমনেরে কু-কু কইলে কান্দেন কিলিগ্যা?
- কান্দি না। কষ্ট লাগে...
- একটা আওয়াজ আমনেরে কষ্ট দিতো পারে, আরেকটা আওয়াজ আনন্দ দিতো পারতো না? আমনে দুনিয়াত
 বাইর অন না, কেডা কুন সময় কুউ করবো... ডরান...
- না, মানে...
- না, আমনে ডরান। একটা শব্দ আমনেরে ডর লাগাইয়া দিতো পারে
মনে অশান্তি আনতো পারে। একটা এমন শব্দ কি নাই, যিডা আনন্দ দিবো, শান্তি দিবো? যান টোকান, আমি ঘুমামু...
     উঠি না। এই হল কাঁচামিঠে আমের গাছ। এইখানে তার আসন পাতা। গপিস্ট বুড়া সত্যই ঘুমিয়ে পড়েছেন। এবং সত্যই মুচকি মুচকি হাসছেনমাঝে মাঝে ভ্রূ কুঁচকে কী যেনো অস্বীকার করছেন। পাখিটা ডাকছে। একটা কলাপাতা ওই। সে বাতাসে নড়ে। ডানে আর বামে। যেনো নিজের গাছকে সে হাওয়া করে দিচ্ছে। আজ রবিবার। এখন দুপুর। নিদাঘ। কী একটা রান্না হবে বলে ডাক পেলাম। কই কোথাও কোনও সাড়া নেই। খিদে পেয়েছে। বাড়িটা সত্যই শুনশান। কী করব? পাশে একটু দূরে একটা ঝোপ। তারপরেই কামরাঙা গাছটা। টুবুর টুবুর। দেখি তো কী পাখি। কাছে যেতেই ঝোপে অলস কিছু পোকা ওড়াউড়ি করে। যেনো অনিচ্ছায়। ভালো করে দেখি জোনাকি। কেমন বেমানান। এখন এই এত আলো। দিনের বেলা। এখন জোনাকি তার আলো কী করেছে? আছে, নাকি নিভিয়ে রেখেছে? দিনের পৃথিবীতে জোনাকি থাকে?
     আজকের দুপুরে আর খাওয়াদাওয়া হবে না। বুঝলাম দুপুরটা নিরেট। হাওয়া আছে। ওপরে কারণ ওই দূরে তেঁতুল গাছের ওপরের পাতা সব নাচছে। নীচে কিছু নেই। কেবল একটা কেমন ডাক ভাসছে। অনেক দূরে কে একটা মা তার ছেলেকে ডাকছে, ‘বাবানু রে...’ হয়তো গোমতীর জলে গিয়ে হুটোপুটি করছে বাবানু। বাবানু। কী নাম... বাবানু রে...

     নন্দদার প্ল্যান বেশি কাজ কম। আসলে কেমন যেনো দিশেহারা। সদানন্দের খাতা, ডায়েরি, ওই ফাইলের লেখা, সব সাজিয়ে একটা বই করতে হবে। এই কাজে তিনি আমায় ডাকেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু গুছিয়ে করতে দেন না। এই খাতাটা দেন, সেটা কেড়ে নেন। সেই ফাইল দেন তো সবটা দেন না। আজকাল আর ভালো লাগে না। কিছুই ভাবতে পারি না। নিজের পাড়াটাকেই কেমন রহস্যময় লাগে।
- বুজ্জি
- না, নন্দদা, সময় নষ্ট। আমনে কী চান কন
- আমি জানলে তো আমনেরে কইতাম... আমনে একবার একবার পড়েন
আমি তো কতবার পড়লাম।
- কী করতাম, কন। আমার মনখারাপ অইয়া যায়...
- আমারও অয়। তবুও দেখেন
বলে একটা খাতা এগিয়ে দেন। পড়ে মনে হল আগের লেখাটার অংশইঃ
এই বাজারটার নাম আৎকা বাজার। আজকাল যেখানে খুশি, যখন খুশি একটা বাজার বসে যায়। সব আছে। মাছও। সব্জি। সবাই ছোট ছোট বাল্ব লাগিয়ে নিয়েছে। কেমন করে সারা উদয়পুরে রটে গেলো এখানে সব তাজা, সব সস্তা। সবাই আসে। অনেকের গাড়ি হয়েছে। গাড়ি নিয়ে আসে। এই একটা ছোট বটগাছও কে যেন লাগালো। হঠাৎ করে রীতিমত বাজার। তাই আৎকা বাজার। মাঝে মাঝে জরিনার ঘোরার বাতিক চাপে। দুপুরে কোথায় একটা জায়গায় গেলোওএনজিসি গ্যাসের জন্য কূপ খুঁড়েছে। তাতে কী করে আগুন লেগে গেছে। মাটির অনেক গভীর হতে দগদগে আগুন ওপরের দিকে উঠে আসে। রাশিয়া না জাপান থেকেও লোক এসেছে। নেভাতে পারছে না। দুপুরে সেইটাই দেখতে গেছে জরিনা। দুপুরে খাওয়া হল নাখাবার নিয়ে এলো খেতে হল। এখন ওই বাজারে যাবে। আৎকা বাজারে। সব্জি নিয়ে বসে একটা ছেলে আছে। মামুনওকে গিয়ে বলে, ‘কও মামুন, কিতা আছে আমার লিগ্যা’। মামুন তার সর্বস্ব দিয়ে ফেলতে চায়। কাস্টমার গুল্লি মারাক।
- কেমন দেখলেন আগুন?
- আমনে দেখছেন? যাইবেন?
- না
- রাগ?
- না
- খাইছে, আমনে দেখি মাইপ্যা কতা কওন শিখছেন। আজগা লাল লাল বেডা দেখলাম। সোজা সোজা। পরিষ্কার। কেমন জানি পানসা।
- ও
- ও কিতা?
- আমনেরে দেইখ্যা মরছেনি এক দুইডা?

     কেমন চুপ মেরে গেলো পরিভাবি। জানালার দিকে যায়
ওইদিকে ছাত। গ্রিলে হাত রাখে। ধরে না কিছু রাখে। এমনি রাখে। উলটো দিক থেকে আলো আসছে। হাতের পাতায় পড়ে ভেদ করে বেরিয়ে চলে আসছে আলো। আসতে গিয়ে গোলাপি হয়ে যাচ্ছে। আঙ্গুলগুলিতে একটা পাখির ডাক। টুবুর টুবুর... টুবুর... টুবুর... অনামিকা। কেমন বেঁকে আছে মধ্যমার দিকে। কনিষ্ঠা ওইদিকে গ্রিলের একটা রডকে আলতো করে ছুঁয়ে আছে। মধ্যমা গ্রিলের একটা রডের আড়ালে পড়ে গেলো। তাই আলো ওকে ছুঁতে পারছে না। আঁকুপাঁকু করছে। বৃদ্ধা আর তর্জনী নিজেদেরকে কী বলাবলি করছিল।  যতটা বাহু আলোতে পড়েছে সেখান থেকে আলো বেরুচ্ছে উলটো। তার তোড়ে বাকি আলো নাই আর। বাইরের আলোটা, যেটা কোথায় কোন সূর্য হতে আসছিল, কেমন দিনের জোনাকি হয়ে যাচ্ছে। স্পষ্ট দেখলাম লোহা গলে যাচ্ছে। আমার পায়ের কাছে কেমন একটা শিরশির হচ্ছে। দেখি পা গলে যাচ্ছে। যেনো মাটি দিয়ে বানানো হয়েছিলো আমাকে। গলে যাচ্ছি, জল পড়েছে গায়েদূরে একটা পাখি ডাকছে, কোথায়? টুবুর টুবুর। আমি নেই। আমি এখন একটা গলে যাওয়া মানুষ। মেঝেতে পড়ে আছি। একটা পাখির ডাক সেই মাটির স্তূপ হতে বেরিয়ে যাচ্ছে। টুবুর টুবুর, টুবুর টুবুর...
-হুনেন
 ডাক শুনতেই দেখি সব আগের মতন। আমি আসলে দাঁড়িয়ে আছি। এদিকে ফিরে আমার চোখের দিকে তাকায় ভাবি। এবার আলো তার পেছনে এসে দাঁড়ালো

-
এই উপরের থিকা পড়লে কেমন ব্যথা?
বুঝতে পারি। চুপ করে থাকি। সজু ওইটা ভালো কাজ করেনি। ওভাবে মরে যায় কেউ?
-আমি মানুষটা কিতা কইতে পারেন? আমি কেডা?
-আমনে কন
-আমনে কন। আমনে কইবেন
আমি কেডা? কেডা আমি? কিতা? কিতা আমি? একজন একজনরে মাইরা লায়। একজন মইরা যায়... আমি কেডা? আমি য্যান চাইয়া থাহি একটা মাইনসের দিকে হ্যায় আমারে মানুষ মানে না। আমার পায়ের সামনে বয়। আমারে সাজায়। গান দিয়া সাজায়, কতা দিয়া সাজায়। সাধনা করে। সাধে না...
- ছাড়েন। ছাড়েন এইসব কথা

- কেরে ছাড়ুম? অদ্দেক জীবন দেখলাম একটা বাঁশির মিধ্যে শ্বাস ফালাইয়া আর কাইন্দা কাডাই দিলো। যত তাইনের তে দূরে যাই, তত তাইনে হাসে... কাছে আইলে কান্দে...
- মজিদভাই তো এমনই?
- তই আমি কেমুন?
হঠাতই বুক হতে কাপড় সরিয়ে দেয় পরিভাবি। কেমন একটা সুডৌল অনচ্ছতা। একটা খাম। বেশ বড়। ব্লাউজের ভেতর বুকের ওপর থেকে নীচে। এক টানে ওটাকে খোলে। ভেতরের সব কাগজ ছুঁড়ে মারে আমার দিকে। এই ছাতা আমনেরে দেখাইতে আনছিলাম হেইদিন। আমনেও হেই পাও লইয়া পড়লেন... আমিও দেখাইতে পারলাম না... দেখেন। হেইদিন দেখলে আজগা আর এই লাজে পড়ি না আমি।


     উইল। সজু করে গিয়েছেসব।সবকিছু। স্থাবর অস্থাবর। মালিক জরিনাবিবিস্বামীঃ মজিদ মিয়াঁ।

রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৭

সদাপুরাণ-২১



অশোক দেব
সদাপুরাণ-২১


পরচুলা শুকোতে দিয়েছে জহিরুল। ঘোড়া মরে গেলে সে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল। এখন আসে। টুপি পরে। টুপির ফাঁকে কাওয়ালদের মতন চুল বেরিয়ে থাকে কানের পাশে। এখন টুপি নেই, সেই চুলও নেই। টাক দেখা যায়। ও এখন সকল ছেড়ে আতরের ব্যবসা ধরেছে। একটা ছোট বাক্স। তাতে নানা রকম খাঁজ। সে খাঁজে খাঁজে কত আকারের যে শিশি। লাল শালুতে পেঁচিয়ে সে বাক্স কাঁধে ঝুলিয়ে সারাদিন ফেরি করে জহিরুলমেলায় মেলায় যায়। নানারকম আতরের গন্ধ মিশে গিয়ে একটা কেমন নেশা নেশা সুগন্ধ হয়। সেটা তার পিছু পিছু ফেরে। একটু অশক্ত হয়েছে। চোখও আর তত উজ্জ্বল নেই কেমন উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকে। এখন স্নান করে এলো। চকচক করছে টাক। যদি ডাক পায় খাবে। আজকাল আর তত রান্না হয় না এ বাড়িতে।
     আজ অমাবস্যা। ভাদ্রমাস। এ কারণেই এসেছে জহিরুল। গপিস্ট বুড়ার সারা বছরের রুটিন তার জানা। আজ বিশেষ পূজা হয় ত্রিপুরাসুন্দরী মায়ের
রাজার লেঠেল গপিস্ট বুড়ার বংশ। আজকের দিনে মায়ের দারোয়ান হতেন তিনিদাতারামে একটা জোলাইবাড়ি আছে। এখানে জোলাইরা থাকতো। রাজ আমলে মায়ের পূজায় মশাল ধরা তাদের কাজসুবল দাস। গপিস্টের থেকে বয়সে বড়। সেই বুড়াও একটা ছোট মশাল নিয়ে আসতো। এই দিনে এসে মা-কে দেখিয়ে যেতো। গপিস্ট গিয়ে প্রধান ফটকে একটা লাঠি নিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। নিয়মরক্ষা করে চলে আসেন। জহিরুল এটার সুযোগ নিতে আসে। অযথা ঘোড়াটোড়া আনে। হইহই লাগায়। গপিস্টকে সে সাজায় যাত্রার পোশাকে। কোথা হতে একটা বেতের শক্ত লাঠিও আনে লম্বা। এই করে বেশ টাকা নিয়ে নেয়। এবার তার ঘোড়া নেই। তবু আসে। কিন্তু ওই জোলাই সুবল মারা যাবার পরে গপিস্টও যান না নিয়মরক্ষা করতে। জহিরুল আসে।  এখন চান সেরে এসেছে। গপিস্টের ঘরে যায় সে।
-   জেডা
-   কন
-   যাইবেন?
-   মার বাড়ি?
-   হুম
-   না
-   আর পারি না
-   বুজি
-   আমনে থাকেন কই?
-   ঘুরি, আতর বেচি
-   কেমন ব্যবসা, চলেনি?
-   জেডা আমনে একটা কাম কইরা দেন না আমারে, দিবেন?
-   কন
-   একটা ফতোয়া দেন
-   কেমন?
-   আতর তো চলে না। আইজকাইল বোতলের সেন্টও চলে না। কিতা বইলে ডিওরেন্ট বাইর অইছে। টিপ দিলে বাইর হয়। ছুত কইরা গ্যাসের মতন ইতান কি মোছলমানের গায়ে দেওন হালাল? মোছলমান দিবো আতর
-   আমনে ভাত খান। বিশ্রাম করেন। যান গা। আর আইবেন না।
জহিরুল বেরিয়ে যায়। আতরের বাক্সটা নেবার সময় অযথা শব্দ করে। জরিনা একটু সাধলে খেয়ে যাবে। কেউ কোথাও নেই।

     আজও অমাবস্যা। ভাদ্রমাস। কেমন একটা রাক্ষুসে রোদ উঠেছে। সদার কাচের ঘর। দূরে মেঘের ছায়া এসে কাচের গায়ে ছায়া পড়েছে। আকাশে সে মেঘ হাঁটে, এই কাচেও। আজ এখানে আসতেই হবে। নন্দ দারোগা বারবার করে বলে দিলেন। আজকে নাকি কী এক অদ্ভুত জিনিস দেখাবেন। আমাকে এইটুকু লেখা দিয়ে চলে গেলেন কোথায়। এটুকু পড়লাম। ঠিকই জহিরুল আতর বেচতে আসতো তখন। তার নাম যে জহিরুল আমরা জানতাম না। ওকে জালালি বলেই ডাকতো সবাই। ঘোড়া আনতো ঠিকই। সেটা একটা এক্কার সঙ্গে জুড়ে জয়রাইডও করাতো মায়ের বাড়িতে। কিন্তু গপিস্ট তাকে একদিন বাড়ি থেকে বের করে দিলেন, সে আমরা কী করে জানবো? হঠাৎ করেই তাকে দেখা যেতো না, এটাও ঠিক। কিন্তু এটুকু লেখা পড়ে আমি কী করব? নন্দদার একটা কাশি আছে। কাশি নয়, মুদ্রাদোষ। সেটা শুনতে পেলাম সিঁড়িতে।
-   পড়ছেন?
-   হ, ইডা তো এট্টুখানি লেখা
-   আছে আছে বাকিডাও আছেইডা তো স্টার্টার
-   মেইন কোর্স দেন, পড়ি
-   শুনেন, সজুরে মনে আছে?
-   হুম, মদ আর ফেন্সিডিল, তির খেলা, রড সিমেন্ট... প্রচুর টাকা করছিল। আৎকা মইরা গেল।
-   একজাক্টলি, ক্যামনে মরল?
-   সিরোসিস হইছলো, না? ঘরের মিধ্যে মইরা পইড়া আছিল
-   ইয়েস, ইয়েস... নেন পড়েন
     এইটাও লাল কাপড়ে বাঁধানো খাতা নয়। ডায়েরিও না। ফাইল। এগুলো থাকে ওই আলমারিতে, যেখানে ওই গয়নাগুলি ছিল। দলিল লেখার কাগজ এগুলো। শেমি। সেই সুন্দর শীতল হাতের লেখা সদানন্দেরঃ
সজু একটা মারুতি ভ্যান কিনেছে। সেটা নিয়েই সে এলো। আজ অমাবস্যা। ভাদ্রমাস। গপিস্টকে সে জোর করে। বারবার বলে ভ্যানে করে মাতাবাড়ি যেতে। দারোয়ানগিরি করতে। কী করে যে রাজিও করে ফেলে। জরিনাও রাজি হয়। জগতে আমার কোনও কাজ নেই। গপিস্টের কাঁচামিঠে গাছের নীচে বসে পড়ছিলাম। সজু আসে।
-   চলেন
-   কই যামু?
-   মার বাড়িত যামু। জেডা একটু নিয়ম করবো। আমরা আইয়া জেডারে নামাইয়া দিয়া ঘুরুম। ভাবিও যাইব।
আমি ওর পিছু পিছু যাই। ও নিজেই চালাবে? কবে শিখলো গাড়ি চালানো? ওর পাশে আমি বসি। জরিনা রহিম মিয়াঁকে নিয়ে আসে। গাড়িতে বসে। রহিম মিয়াঁর যেন ইচ্ছে নেই তেমন। সজু নেমে গিয়ে সাঁত সাঁত করে দরোজা লাগায়। ছোটে। সবাই নীরব। মাতাবাড়ি। আমি নামলাম না। সজুও না। জরিনা গপিস্টকে নিয়ে নামে। ওই তো মূল ফটক। রাস্তা থেকে দূরে, উঁচুতে। দেখা যায়। গপিস্ট শিরদাঁড়া সোজা করে মিনিটখানেক দাঁড়ালেন। আবার বসলেন এসে গাড়িতে। আবার সজু সাঁত করে দরোজা লাগায়। ছোটে। বাড়ি এসেই রহিমকে নিজে গিয়ে নামিয়ে দিতে যায়জরিনা নামে না। আমিও না। চুপ। কোথায় ঘোরাতে নিয়ে যাবে সজু আমাদের? ভাবিকে জিগ্যেস করি,
-   কই যাইবো?
-   জানিনা
-   তই?
-   তই কিছু না, নাটক, বইয়া থাকেন, দেখেন
সজু আসে। বসে। গাড়ি স্টার্ট করে। ছোটেঅমরপুরের রাস্তা ধরে। কী স্পিড! যেনো কে পালিয়ে যাচ্ছে।
-   সদাভাই
-   কও
-   আমনে হুনছেন সুইজ্য যহন অস্ত যায় তখন ক্যামনে পাখি ছাড়া বাকিরা চুপ করে?
-   পাখির ডাক শুনি
-   হেইডা তো হগলে শুনে
-   তো?
-   যিডা চুপ অইয়া যায়, হিডা হুনছেন? আই মিন সায়লেন্স?
-   সজু
-   কন
-   তুমি তো একসময় প্রচুর পড়তা। কিতা কিতা লেখতা, ঠিক না?
-   পড়তাম। লেখতাম, কবিতা... ছদ্মনামে... সজল সমুদ্র
-   অহন?
-   অহন মাডি টানি, রড সিমেন্ট ঘাডি
-   তিরখেলা?
-   আছে... ইতান বাদ দেন, এই দেখেন
এর মধ্যেই সে চলে আসে এইখানে। দূরে কালাঝারি পাহাড়। এদিকে তার কোল ছড়ানো। সূর্যাস্ত হয়ে গিয়েছে। উলটো দিকে। সত্যই কেমন একটা নীরবতা ছড়িয়ে আছে, শব্দের মতন।
-   লামেন
জরিনা নেমে আসে। আমরা তিনজন। ওই দূরে একটা অজানা নীলে চোবানো পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে আছি। একটুক্ষণ। যেনো বহুদূর থেকে কেউ মন্ত্র পড়ছে, এমন ভাবে কথা বলে সজু, ‘আমি খারাপ। মা সুইসাইড। বাবা পাগল পাগল। ভাই কই জানি। বইনডা সার্কাসের পোলার লগে গেলো গা। অহন শিলচরে বেশ্যা। এইসবের লিগ্যা না। আমি এমনেই খারাপ। আমনেরে বালাপাইছি। কাছে যাইতাম চাই। আমনে ফিট অইয়া যান। আমনের লিগ্যা মাচ্ছারে মারছি। মাইরা লাইছি। আমারে মাপ করেন।
-   কি কও সজু, চুপ করো
-   আমনের লগে কেডা কতা কয়? আমনে চুপ থাকেন সদাভাই
     ধীরে গাড়িতে গিয়ে উঠে পড়ে জরিনা। পিছু পিছু আমিও যাই। বসি সজুর সঙ্গের সিটে। সামনে। ও আসে না। দাঁড়িয়ে আছে এখনও। একটা আঁধার তার পায়ের থেকে ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠছে। যেন এই সময়টা শেষ হবে না। আমি নেমে গিয়ে ওকে নিয়ে আসবো? দরোজা খুলতেই ও ফিরে আসে।
     অবিশ্বাস্য স্পিডে সজু আমাদের উদয়পুর নিয়ে আসে। এই পাড়াটা আমার তেমন চেনা নেইঅনেক গলি। কোথা কোথা দিয়ে সে একটা বাড়িতে এনে সোজা উঠানে চলে আসে। বাড়িটা পুরনো। সজু নামে। কেন কে জানে, নিজেই দরোজা খুলে নেমে পড়ে জরিনা। বাড়িটার দিকে তাকায়, ইতিউতি দেখে।
-   আমার। পুরান বাড়ি কিনলাম
-   সব বাড়িই পুরান
-   চলেন
বলেই ঘরে যায় সজু। জরিনাও। পিছু পিছু গিয়ে ঘরে ঢুকে আমি অবাক। এত বড় ঘর? একটা বিশাল টেবিল। তার ওপর একটা সত্যকার ঝাড়বাতি। জ্বলছে। টেবিলটাকে ঘিরে সিনেমার চেয়ারের মতন চেয়ার পাতাসজু একটাকে একটু সরিয়ে জরিনাকে বসতে দেয়। জরিনা বসে। সজু আমাকে হাতে ইঙ্গিত করে বসতে। বসি। একটা বড় গেলাস আর দামি হুইস্কি নিয়ে আসে। সঙ্গে একটা সাদা কৌটো। একটাই জিনিস কেমন লাগছে, সারা মেঝেতে কী জানি বড়ির খালি র‍্যপার ছড়িয়ে  আছে। সদা মদ ঢালে। জরিনা কেমন বিবশ।
-   আমি যামু
-   যাইবেন
-   শইল খারাপ লাগে। আমনে ইতান কইরেন না
‘থাক না সজু’। বলে সারিনি, ‘এই কু-র বাচ্চা। চুপ মাইরা ব, দেখ কিতা করি’ জরিনা কেমন ফুঁপিয়ে ওঠে, ‘না, আমার কিছু করনের নাই সজু, তুমি বালা মানুষ, আমার মানুষের লগে অয় না... বন্ধ করো, সদাভাই আমনে কন না’
-   সজু, জানোই তো ভাবি পারে না মদ সইজ্য করতে...
-   চুপ
     সজু মদ ঢালে। অনেকটা। সাদা কৌটা থেকে অনেকগুলো বড়ি ঢেলে দেয় তাতে, ‘আমি জানি, আমি খারাপ। আমার আর ভাল্লাগে না কিছু। সদাভাই, আমি ওই জমিবাড়ি চাইছিলাম, ভাবিরে চাইছিলাম। দুইডা মিশ খায় না। আমিই মিশ খাই না। ইডি ঘুমের ট্যাবলেট। দেড়শোডা... আমারে মাপ কইরেন... টুক করে গিলে ফেলে সে এই বড়ি মেশানো মদ। নিট। চোখমুখ কেমন করে ওটাকে সহ্য করে নেয় একটু। কাঁদছে?  কেমন একটা মদ যেনো, পুরনো আতরের মত গন্ধ। ও গিলতেই বেরিয়ে যায় জরিনাভাবি। বিদ্যুৎ। আমি চেয়ার ছেড়ে বেরিয়ে আসতেই দেখি ছুটছে...

-   কী বুঝলেন?
-   নন্দদা
-   কন
-   আমনে চুপ কইরা থাকেন তো অনেকক্ষণ। চুপ করেন।