রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৭

সদাপুরাণ-২২


অশোক দেব
সদাপুরাণ-২২

রক্ত ভারি অয়। সব শিরা ঢিলা অইয়া যায়। চক্ষের আর দেখবার ইচ্ছা থাকে না। দুনিয়াত হুননের মতন কুনু কথা থাকে না আর
মন নতুন কিছু নেয় না।  মনের মিধ্যে জাগা থাকে না আরমন ঘামাইয়া যায়। দেখবেন বাইচ্চা অইলে নতুন নতুন কেবল ঘুমায়। ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া কার লগে জানি হাসে। কেবল হাসে। ঘুমের বাইচ্চা খিলখিল কইরা উডে। আবার ঘুমাইয়া যায়। তারে আল্লামিয়াঁ কতকিছু খেইল দেখায়। কয়, এমন এক জাগা আছে কেবল জল। যত দূরে দেখবা কেবল জল। হিডারে কয় সাগর। ঘুমের বাইচ্চা বিশ্বাস করে না। হাসে। আল্লামিয়াঁ কয়, এমন একটা জাগা বানাইছি কেবল বালুযতদূর দেখবা কেবল বালু। শিশু মানে না, হাসে। তবু তার ঘুম ভালা লাগে। যা দেখেনাই, যা হুনেনাই, তা দেখনের লিগ্যা, তা হুননের লিগ্যা ঘুমায়। সারাদিন ঘুমায়। আমারও ঘুম আইয়ে। অহন আমি আর বাইচ্চা নাই। সাগর দেখসি না, তবে সাগর আছে। মরু দেখসি না, তবে আছে। জানি। যারা দেখসে তারা কয়। আমিও যা যা পারলাম দেখলাম, হুনলাম। অহন পুরান অইছি। ঘুমের নিশা অয়। ঘুমের মিধ্যে দেখি ওই দেশ। হেই দেশে  হাতে পরাণ লইয়া মানুষ মানুষের দিকে দৌড়াইয়া যায়। বাইচ্চা ঘুমের পিডে চইরা জগতে আইয়ে। আমি বুড়া ঘুমের উপরে চইরা দুনিয়ার থিকা যাইগা।
- আমনে না ঘুমাইতে ঘিন্না করেন?
- করতাম
- অহন?
- ওই যে কইলাম, কতা বোজেন না?
- বুজি
- সদামিয়াঁ
- কন
- যামুগা
- কই যাইবেন?
- ওই যে পক্ষীডা ডাকে হুনেন? ওই যে, টুবুর টুবুর... টুবুর টুবুর... হুনেন? ওইখানে যামু
- ইডা তো ওই তো, কামরাঙা গাছে বইয়া ডাকতাছে
- এই তো বুঝলেন না। আমনে হুনতাসলেন? আমি কওনের আগে পক্ষীডার ডাক আমনে হুনতাসলেন? হুনেননাই। কিন্তু ওইডা তো আছিলো। আছিলো না? আমনে জানতেন না কই আছিলো।হারাদিন তো খাইলো দাইলো, যদ্দুর উড়নের উড়লো। অহন ওই গাছে বইছে। আছে কিন্তুক নাই। ডাকে কেবল ডাকে, বিশ্রাম নাই... কেবল ডাকে... জিকির দেয়, আমনেরা য্যান কন জপ... পক্ষী জপ করে। একটাই কতা বারবার কয়... আমিও একটা কতা অহন কেবল কই... যামুগা, যামুগা, যামুগা... একটা কতা বারবার নিজেরে কইলে কতাডাই আমনেরে চালাইবো। হারাদিন উড়বেন, খাইবেন দাইবেন, একটা সময় বইয়া ওই পক্ষীর মতন একটা বালা কতা বারবার কইবেন...
- তাইলে কী অইব?
- আমনে বালের নি শিক্ষিত? কিতা বোজেন?
- না, মানে একটা কতা বারবার...
- এই নাটঢিল, আমনেরে কু-কু কইলে কান্দেন কিলিগ্যা?
- কান্দি না। কষ্ট লাগে...
- একটা আওয়াজ আমনেরে কষ্ট দিতো পারে, আরেকটা আওয়াজ আনন্দ দিতো পারতো না? আমনে দুনিয়াত
 বাইর অন না, কেডা কুন সময় কুউ করবো... ডরান...
- না, মানে...
- না, আমনে ডরান। একটা শব্দ আমনেরে ডর লাগাইয়া দিতো পারে
মনে অশান্তি আনতো পারে। একটা এমন শব্দ কি নাই, যিডা আনন্দ দিবো, শান্তি দিবো? যান টোকান, আমি ঘুমামু...
     উঠি না। এই হল কাঁচামিঠে আমের গাছ। এইখানে তার আসন পাতা। গপিস্ট বুড়া সত্যই ঘুমিয়ে পড়েছেন। এবং সত্যই মুচকি মুচকি হাসছেনমাঝে মাঝে ভ্রূ কুঁচকে কী যেনো অস্বীকার করছেন। পাখিটা ডাকছে। একটা কলাপাতা ওই। সে বাতাসে নড়ে। ডানে আর বামে। যেনো নিজের গাছকে সে হাওয়া করে দিচ্ছে। আজ রবিবার। এখন দুপুর। নিদাঘ। কী একটা রান্না হবে বলে ডাক পেলাম। কই কোথাও কোনও সাড়া নেই। খিদে পেয়েছে। বাড়িটা সত্যই শুনশান। কী করব? পাশে একটু দূরে একটা ঝোপ। তারপরেই কামরাঙা গাছটা। টুবুর টুবুর। দেখি তো কী পাখি। কাছে যেতেই ঝোপে অলস কিছু পোকা ওড়াউড়ি করে। যেনো অনিচ্ছায়। ভালো করে দেখি জোনাকি। কেমন বেমানান। এখন এই এত আলো। দিনের বেলা। এখন জোনাকি তার আলো কী করেছে? আছে, নাকি নিভিয়ে রেখেছে? দিনের পৃথিবীতে জোনাকি থাকে?
     আজকের দুপুরে আর খাওয়াদাওয়া হবে না। বুঝলাম দুপুরটা নিরেট। হাওয়া আছে। ওপরে কারণ ওই দূরে তেঁতুল গাছের ওপরের পাতা সব নাচছে। নীচে কিছু নেই। কেবল একটা কেমন ডাক ভাসছে। অনেক দূরে কে একটা মা তার ছেলেকে ডাকছে, ‘বাবানু রে...’ হয়তো গোমতীর জলে গিয়ে হুটোপুটি করছে বাবানু। বাবানু। কী নাম... বাবানু রে...

     নন্দদার প্ল্যান বেশি কাজ কম। আসলে কেমন যেনো দিশেহারা। সদানন্দের খাতা, ডায়েরি, ওই ফাইলের লেখা, সব সাজিয়ে একটা বই করতে হবে। এই কাজে তিনি আমায় ডাকেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু গুছিয়ে করতে দেন না। এই খাতাটা দেন, সেটা কেড়ে নেন। সেই ফাইল দেন তো সবটা দেন না। আজকাল আর ভালো লাগে না। কিছুই ভাবতে পারি না। নিজের পাড়াটাকেই কেমন রহস্যময় লাগে।
- বুজ্জি
- না, নন্দদা, সময় নষ্ট। আমনে কী চান কন
- আমি জানলে তো আমনেরে কইতাম... আমনে একবার একবার পড়েন
আমি তো কতবার পড়লাম।
- কী করতাম, কন। আমার মনখারাপ অইয়া যায়...
- আমারও অয়। তবুও দেখেন
বলে একটা খাতা এগিয়ে দেন। পড়ে মনে হল আগের লেখাটার অংশইঃ
এই বাজারটার নাম আৎকা বাজার। আজকাল যেখানে খুশি, যখন খুশি একটা বাজার বসে যায়। সব আছে। মাছও। সব্জি। সবাই ছোট ছোট বাল্ব লাগিয়ে নিয়েছে। কেমন করে সারা উদয়পুরে রটে গেলো এখানে সব তাজা, সব সস্তা। সবাই আসে। অনেকের গাড়ি হয়েছে। গাড়ি নিয়ে আসে। এই একটা ছোট বটগাছও কে যেন লাগালো। হঠাৎ করে রীতিমত বাজার। তাই আৎকা বাজার। মাঝে মাঝে জরিনার ঘোরার বাতিক চাপে। দুপুরে কোথায় একটা জায়গায় গেলোওএনজিসি গ্যাসের জন্য কূপ খুঁড়েছে। তাতে কী করে আগুন লেগে গেছে। মাটির অনেক গভীর হতে দগদগে আগুন ওপরের দিকে উঠে আসে। রাশিয়া না জাপান থেকেও লোক এসেছে। নেভাতে পারছে না। দুপুরে সেইটাই দেখতে গেছে জরিনা। দুপুরে খাওয়া হল নাখাবার নিয়ে এলো খেতে হল। এখন ওই বাজারে যাবে। আৎকা বাজারে। সব্জি নিয়ে বসে একটা ছেলে আছে। মামুনওকে গিয়ে বলে, ‘কও মামুন, কিতা আছে আমার লিগ্যা’। মামুন তার সর্বস্ব দিয়ে ফেলতে চায়। কাস্টমার গুল্লি মারাক।
- কেমন দেখলেন আগুন?
- আমনে দেখছেন? যাইবেন?
- না
- রাগ?
- না
- খাইছে, আমনে দেখি মাইপ্যা কতা কওন শিখছেন। আজগা লাল লাল বেডা দেখলাম। সোজা সোজা। পরিষ্কার। কেমন জানি পানসা।
- ও
- ও কিতা?
- আমনেরে দেইখ্যা মরছেনি এক দুইডা?

     কেমন চুপ মেরে গেলো পরিভাবি। জানালার দিকে যায়
ওইদিকে ছাত। গ্রিলে হাত রাখে। ধরে না কিছু রাখে। এমনি রাখে। উলটো দিক থেকে আলো আসছে। হাতের পাতায় পড়ে ভেদ করে বেরিয়ে চলে আসছে আলো। আসতে গিয়ে গোলাপি হয়ে যাচ্ছে। আঙ্গুলগুলিতে একটা পাখির ডাক। টুবুর টুবুর... টুবুর... টুবুর... অনামিকা। কেমন বেঁকে আছে মধ্যমার দিকে। কনিষ্ঠা ওইদিকে গ্রিলের একটা রডকে আলতো করে ছুঁয়ে আছে। মধ্যমা গ্রিলের একটা রডের আড়ালে পড়ে গেলো। তাই আলো ওকে ছুঁতে পারছে না। আঁকুপাঁকু করছে। বৃদ্ধা আর তর্জনী নিজেদেরকে কী বলাবলি করছিল।  যতটা বাহু আলোতে পড়েছে সেখান থেকে আলো বেরুচ্ছে উলটো। তার তোড়ে বাকি আলো নাই আর। বাইরের আলোটা, যেটা কোথায় কোন সূর্য হতে আসছিল, কেমন দিনের জোনাকি হয়ে যাচ্ছে। স্পষ্ট দেখলাম লোহা গলে যাচ্ছে। আমার পায়ের কাছে কেমন একটা শিরশির হচ্ছে। দেখি পা গলে যাচ্ছে। যেনো মাটি দিয়ে বানানো হয়েছিলো আমাকে। গলে যাচ্ছি, জল পড়েছে গায়েদূরে একটা পাখি ডাকছে, কোথায়? টুবুর টুবুর। আমি নেই। আমি এখন একটা গলে যাওয়া মানুষ। মেঝেতে পড়ে আছি। একটা পাখির ডাক সেই মাটির স্তূপ হতে বেরিয়ে যাচ্ছে। টুবুর টুবুর, টুবুর টুবুর...
-হুনেন
 ডাক শুনতেই দেখি সব আগের মতন। আমি আসলে দাঁড়িয়ে আছি। এদিকে ফিরে আমার চোখের দিকে তাকায় ভাবি। এবার আলো তার পেছনে এসে দাঁড়ালো

-
এই উপরের থিকা পড়লে কেমন ব্যথা?
বুঝতে পারি। চুপ করে থাকি। সজু ওইটা ভালো কাজ করেনি। ওভাবে মরে যায় কেউ?
-আমি মানুষটা কিতা কইতে পারেন? আমি কেডা?
-আমনে কন
-আমনে কন। আমনে কইবেন
আমি কেডা? কেডা আমি? কিতা? কিতা আমি? একজন একজনরে মাইরা লায়। একজন মইরা যায়... আমি কেডা? আমি য্যান চাইয়া থাহি একটা মাইনসের দিকে হ্যায় আমারে মানুষ মানে না। আমার পায়ের সামনে বয়। আমারে সাজায়। গান দিয়া সাজায়, কতা দিয়া সাজায়। সাধনা করে। সাধে না...
- ছাড়েন। ছাড়েন এইসব কথা

- কেরে ছাড়ুম? অদ্দেক জীবন দেখলাম একটা বাঁশির মিধ্যে শ্বাস ফালাইয়া আর কাইন্দা কাডাই দিলো। যত তাইনের তে দূরে যাই, তত তাইনে হাসে... কাছে আইলে কান্দে...
- মজিদভাই তো এমনই?
- তই আমি কেমুন?
হঠাতই বুক হতে কাপড় সরিয়ে দেয় পরিভাবি। কেমন একটা সুডৌল অনচ্ছতা। একটা খাম। বেশ বড়। ব্লাউজের ভেতর বুকের ওপর থেকে নীচে। এক টানে ওটাকে খোলে। ভেতরের সব কাগজ ছুঁড়ে মারে আমার দিকে। এই ছাতা আমনেরে দেখাইতে আনছিলাম হেইদিন। আমনেও হেই পাও লইয়া পড়লেন... আমিও দেখাইতে পারলাম না... দেখেন। হেইদিন দেখলে আজগা আর এই লাজে পড়ি না আমি।


     উইল। সজু করে গিয়েছেসব।সবকিছু। স্থাবর অস্থাবর। মালিক জরিনাবিবিস্বামীঃ মজিদ মিয়াঁ।

1 টি মন্তব্য:

  1. Not to say, if you end up} up and working, the prices of overheads and ongoing costs are significantly much less. Fast Offshore works predominantly inCuracao, Kahnawake and Malta. We discover that these jurisdictions supply an excellent balance of benefits and obligations. Each case is totally different and every on line casino operator has a special focus phrases of|when it comes to|by way of} games, audience, budget and timescale. The availability and integration of new technologies have led to a full transformation of what’s on supply. This, in flip, has sparked curiosity from those 카지노 사이트 who previously hadn’t thought of on-line gambling.

    উত্তরমুছুন