মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০১৪

অক্রিকেটিয়





ভারতীয় উপমহাদেশে যে বিষয়ে প্রায় প্রতিটি মানুষ বিশেষজ্ঞ, তার নাম ক্রিকেট। জীবনে যে মাঠে নামেনি, সে-ও সূক্ষ্মতম বিষয়ে অধিনায়ককে উপদেশ দিতে পারে। জননাঙ্গে, বুকে, মাথায়, হাতে, থাইয়ে এবং পায়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে যে খেলা খেলতে হয় তার নাম ক্রিকেট। মাঝে একবার খেয়ে, জলপান করে, ধীরসুস্থে সেজেগুজে যে খেলা দর্শকদের জন্য পরিবেশন করতে হয় তার নাম ক্রিকেট। নাচার উঠানটিকে টিপে, ফাটাফুটি পরিমাপ করে, মাঠযত্নকারীর জাদুহস্তের আশীর্বাদ নিয়ে ক্রিকেটনৃত্য পরিবেশন করতে হয়। বায়ুপ্রবাহের গতি ও অভিমুখ, শিশিরের পরিমান ও ঘনত্ব, দেশ না বিদেশ, ইত্যাদিও বিবেচনা করতে হয়। বিবেচনা করতে হয় ছুঁড়ে দেওয়া বলের বয়স। পুরাতন হয়ে গেলে এক ফল নব্যবলের আরেক ফল। থুতু দিয়ে, জামায় মুছে, প্যান্টে মুছে সেই বলটিকে চকচকে করে তুলতে হয়। তারপর খেলার আয়োজন।
আয়োজন হলেই গলিতে ঘুপচিতে জেগে ওঠে ফেউ। তারা ফোনে ঠিক করে দেয় কাকে ছেড়ে দিতে হবে হাতে আসা ক্যাচ। কে বল করার আগে নাচিয়ে দেবে ধবল রুমাল, কিংবা কে অকারণ ওয়াইড করে যাবে। ‘মানুষ বেকুব চুপ’। টিভির সম্মুখে। ‘কেমন মোচড় দিয়া ট্যাকা নিয়া যায় বাজিকর’। এদিকে ভারত হল ক্রিকেটের বারাক ওবামা। প্রচুর টাকা। টাকা যার খেলা তার। চাপ দিয়ে নিয়ম পাল্টানোর গুর্দা আছে ভারতের। ১২৫কোটি অলস আছে দেশে। সুতরাং ক্রিকেটের বাজার এখানে ভালো হবেই। চারা হবে চাষ হবে। গ্রামে গঞ্জে, মহকুমা শহরগুলিতেও ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন গড়ে উঠেছে। টাকা উড়ছে। গ্রামের ছেলেদের খেলার মাঠ লিজে নিয়ে যাচ্ছে ক্রিকেটের মাতব্বরগণ।
কাঁধে নিজের থেকে বড় কিটব্যাগ নিয়ে সাইকেলে বিকাল আসে পাড়ার ছেলেটির। বাড়ি থেকে বেরোবার আগে সে প্রণাম করে এসেছে ভারত রত্ন শচিনের ছবিতে। সে একটি জালের মধ্যে আবদ্ধ করে নিজেকে। অবিরাম তার দিকে ছুটে আসে লালসাদা বল। সে ঠুকে যায়, ঠোকা শেষে ঠোকার ভঙ্গি করে আরও কিছুক্ষণ, তারপর মেশিনের মুখ থেকে গবাৎ করে বেরিয়ে আসে আরেকটি বল, আরেকটি... আরেকটি... সে নীরবে ঠোকে। বাড়িতে এসেও তার বিরামহীন ঠোকা শেষ হয় না। বারান্দায় দড়িতে ঝোলানো বল সে সময় পেলেই ঠোকে। কোনও ঘাম নেই, খেলার আনন্দ নেই, হই নেই হুল্লুড় নেই। যেন সে এক ক্রীড়াবিদ্যালয়ে এসে জুটেছে। স্যারের চাপের থেকে এসে কোচের চাপে পড়েছে। মাঝে মাঝে পেছনে ওজন বেঁধে দেওয়া হয়। সে জোয়ালে বাঁধা গরুর মত সেটাকে টানতে টানতে ছোটে। যেন মার্কিন মুলুকের সেই নিগ্রো ক্রীতদাস সে।
প্রাণের আনন্দে পাড়ার সকল ইয়ারবান্ধবদের ডেকে এনে জাম্বুরা নিয়ে ফুটবল খেলা অতএব স্মৃতি হয়েছে। খেলোয়াড় হতে নয়, জয়ী হতে নয়, কেবলই আনন্দ উদযাপনের জন্য যে ক্রীড়াবিলাস, তাকে হত্যা করা হয়েছে ক্রিকেটের রক্তচোঁয়া টাকায়। যে ছেলে তেমন ডাক্তার হবে না, তেমন ইঞ্জিনিয়ার হবার আশা যার নাই, তাকে নিয়ে শীতার্ত বাবা ক্রিকেট কোচের কাছে দাখিল করেন। অন্তত একটা রঞ্জি খেলে ফেলতে পারলেও তো দাঁড়িয়ে যাবে ছেলেটা।
হয়তো এ এক বিকল্প জীবিকার আলো। কিংবা এ এক নিরানন্দ অন্ধকার। কেননা, একটি খেলার সাথে ইতিমধ্যে জুড়ে দেওয়া হয়েছে রাজনীতির জাদুটোনা। যে ছেলে পাড়ায় ভদ্র, নম্র, শিক্ষিত, সে ক্রিকেটে পাকিস্তানিদের জয়কে যে ভাষায় গালি দেয়, তাতে বোঝা যায় আসলে তার মধ্যে রয়েছে এক অসভ্য রাক্ষসের বসবাস। ক্রিকেট তাকে কী করে তোলে?
আর কিছু না হোক উপমহাদেশের অলসাংশে ক্রিকেট আছে। যে খেলায় শ্রম লাগে, মেধা লাগে, উপস্থিত বুদ্ধি লাগে, আর আত্মস্বার্থসর্বস্ব রেকর্ডক্ষুধা যেখানে অর্থহীন, সেসব খেলা আমরা খেলতে পারি না। আমরা একটা এমন খেলা পারি, যে খেলা একটি সামন্ত দিনযাপনের উপায়বিশেষ।

৪টি মন্তব্য:

  1. sotti e DADA apnar lekhati....
    emonti kore kono din o bhaba hoi ni cricket khelatake...apnar lekhati te cricket chelar nekkar tomo dik ta fute utheche.....r ektu sonjojon korte parten...IPL ke....
    nitanto binodon er name a banijjo o Communal ism ...eta banglar team ota mumbai er ata delhi r ...desh bhag ar cricket preme ra...se katha r ki bolar...
    cricket player ra hoye utthe manush theke bostu...jader bikri kora hoi ....NILAM er madhome ,,,,sotti e dukkho jonok...
    TOBUO AMRA SDORPE BOLI AMRA CRICKET BHALOBASI....
    KOTHAE SAI BHALOBASA...?
    R KOTHA E BA SAI CRICKET....
    BORTOMAAN E JA DEKHA JAI SETA NITANTO E COMMERCIALIZATION....
    ;
    ;kichu dosoniyo bole thake khoma-prarthe..kauke aaghat kore thakle dukkhitooo..............

    উত্তরমুছুন
  2. Its game won to read this write up. I dont need cricket

    উত্তরমুছুন